নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মে, ২০২২ ২৩:৪৭

নগরে ২০ টাকার রিকশা ভাড়া এখন ১০০!

উপশহর থেকে তেররতণের দূরত্ব বড়জোর এক কিলোমিটার। আগে এটুকু পথ যেতে রিকশা ভাড়া লাগত সর্বোচ্চ ২০ টাকা। তবে পাঁচ-ছয় দিন ধরে ১০০ টাকার কমে যেতে চাচ্ছেন না কোনো চালকই। আর অটোরিকশার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে চাইছেন অন্তত দেড় শ টাকা!

বন্যায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সিলেট নগরের প্লাবিত কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এই দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে যানবাহনের ভাড়া। বন্যায় সড়ক তলিয়ে যাওয়াকে পুঁজি করে ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

নগরের উপশহর এলাকার এ-ব্লকের বাসিন্দা সুদীপ্ত চৌধুরী গ্রামীণফোনে চাকরি করেন। ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উপশহর মোড় থেকে আগে আমার বাসায় যেতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাগত। কিন্তু এখন ১০০ টাকার নিচে কোনো রিকশা যায় না। আর অফিসে যেতে লাগে দেড় থেকে ২০০ টাকা।’

সুদীপ্ত জানান, তার বাসায় বিদ্যুৎ নেই। গ্যাসও নেই। ফলে হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়। অবস্থা এমন যে, তিন দিন ধরে তিনি গোসলও করেননি। এর মধ্যে রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়া আরেক দুর্ভোগ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন তো বাড়েনি। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’

শনিবার দুপুরে উপশহরে রোজভিউ হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো রিকশা ও অটেরিকশা। উপশহরের ভেতরের সবগুলো সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব বাহন ছাড়া চলাচলের আর কোনো উপায় নেই।

এই মোড় থেকে শিবগঞ্জ মোড়ে যেতে রিকশাচালকদের সঙ্গে দরদাম করছিলেন গৃহিণী তানজিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘বন্যাকে পুঁজি করে রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা ভাড়া চার-পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের জিম্মি করে ফেলেছেন তারা।’

তানজিনা আরও বলেন, ‘এখন রিকশায় উঠলেই ১০০ টাকা দিতে হয়। এর কমে কোথাও যেতে চান না চালকরা।’

শনিবার নগরের প্লাবিত অন্য কয়েকটি এলাকা ঘুরে এই একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় ভাড়া নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বিবাদ লেগে যেতেও দেখা গেছে।

তবে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি দেখিয়ে উপশহর মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক জাবের উদ্দিন বলেন, ‘পানির মধ্য দিয়ে আমরা রিকশা চালাই। পানি যে জায়গায় বেশি সেখানে রিকশা চালানো যায় না। ধাক্কা দিয়ে নিতে হয়। আবার পানির নিচে সড়কের ভাঙাচোরা বোঝা যায় না। এ কারণে চাকার রিংও যখন-তখন ভাঙছে। এসব কারণে আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।’

নগরের কালিঘাট থেকে বাজার নিয়ে অটোরিকশায় চড়ে মাছিমপুর বাসায় আসেন উত্তম দাস। তিনি বলেন, ‘আগে ৫০ টাকায় এই পথটুকু আসতাম। আজকে ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। এর নিচে কোনো অটোরিকশা আসতে চায় না।’

উত্তমকেকে নিয়ে আসা অটোরিকশাচালক মক্তার আহমদ বলেন, ‘পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে আমরা গাড়ি চালাচ্ছি। পানি ঢুকে অনেক সময় ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা বেশি ভাড়া তো দিতেই হবে।’

নগরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর নগরের রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া প্রায় দিগুণ বাড়িয়ে দেন চালকরা। এবার বন্যার সুযোগে তারা ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, ‘আমার বাসা থেকে শেখঘাট পয়েন্ট পায়ে হাঁটা দূরত্ব। আগে হেঁটেই চলাচল করতাম। এখন পানির কারণে হেঁটে যেতে পারি না। কিন্তু এইটুকু পথ ৭০-৮০ টাকার নিচে কোনো চালকই যেতে চাচ্ছেন না।’

২০১৬ সালে সিলেট নগরের রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তবে শুরু থেকেই ভাড়ার এই হার প্রত্যাখ্যান করে আসছেন চালকরা। ফলে সিসিক নির্ধারিত ভাড়া কখনই কার্যকর হয়নি। পরে সিসিকের পক্ষ থেকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা আর করা হয়নি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণ বা তদারকির দায়িত্ব পুলিশের নয়। তবে মানুষের দুর্ভোগকে পুঁজি করে তাদের জিম্মি করে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় থেকে চালকদের বিরত থাকা উচিত। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও এ বিষয়ে নজর রাখবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত