সিলেটটুডে ডেস্ক:

২২ জুন, ২০২২ ২১:৩৯

বন্যায় তলিয়ে গেছে কবরস্থান, পাঁচ দিন পর মরদেহ দাফন

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিল ৮০ শতাংশের বেশি জায়গা। তাতে মৃতদের দাফন করার জন্য জায়গা পর্যন্ত ছিল না। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মরদেহ দাফনের কাজ শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মারা যাওয়ার ৫ দিন পর আশরাফ আলীর মরদেহ দাফন করতে পেরেছে তার পরিবার।

বুধবার দুপুরে শহরতলির সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের কবরস্থানের সামান্য অংশ থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আশরাফ আলীর লাশ দাফন হয়।

একই গ্রামের বাসিন্দা সাজন মিয়ার মরদেহ পাঁচদিন ধরে কফিনবন্দি হয়ে আছে। কবরস্থান থেকে বন্যার পানি নামলে বৃহস্পতিবার তার লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সাজন মিয়ার স্বজনরা।

গত বৃহস্পতিবার উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে সুনামগঞ্জ শহরসহ প্রায় প্রতিটি গ্রাম প্লাবিত হয়। শুক্রবার ভোর রাতে পানির উচ্চতা হঠাৎ করে চার থেকে পাঁচ ফুট বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি-ঘরসহ জনপদে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে একতলা ঘরবাড়ি পানির নিচে চলে যায়।

এমনকি জেলার বিভিন্ন কবরস্থান, শ্মশানেও হাঁটু থেকে কোথাও কোথাও গলা সমান পানি ছিল। এমন অবস্থায় স্বজনদের লাশ দাফন করতে না পেরে কফিনবন্দি করতে পানি কমার অপেক্ষা করেন। ৪-৫ দিন পর বন্যার পানি নামতে শুরু করায় স্বজনদের লাশ দাফন করেন তারা।

সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম আলী জানান, ঘরের চাল সমান পানি হওয়ায় তার বাবাকে নিয়ে ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলায় ওঠেন তারা। সেখানে শুক্রবার রাত পৌঁনে একটায় তার বাবা আশরাফ আলী (৭০) মারা যান। পরেরদিন অনেক চেষ্টা করে একটি কাঠের বাক্স দিয়ে নিজেরাই কফিন তৈরি করেন তারা। পরে দুটি বাঁশ কুপে পানির উপর তার বাবার লাশ বেঁধে রাখেন। ৫ দিন পর বুধবার কবরস্থানে উচুঁ অংশ ভেসে উঠলে বাবার লাশ দাফন করেন তারা।
ইব্রাহিম আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ত্রাণকেন্দ্রে গিয়ে হঠাৎ করে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যান।

একই গ্রামের সাজন মিয়া (৬০) বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ফেরার সময় বাসে মারা যান। তার মরদেহও একদিন পর কফিনবন্দি করে ইব্রাহিমপুর কবরস্থানে নিয়ে বাঁশ কুপে বেঁধে রাখা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন বললেন, পাঁচ-ছয়টি ইউনিয়নের মধ্য মরদেহ দাফন করার জন্য কোনো জায়গা ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি সাহায্য করার। পরে তাদেরকে কাঠের বাক্স দিয়ে সহায়তা করে বলেছি, কফিন নিয়ে পানির উপরে ভালো করে বেঁধে রাখো। পানি কমলে দাফন করবে। আজ কবরস্থানের উঁচু একটি অংশের পানি কমেছে, এজন্য একজনের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সাজন মিয়াকে কাল দাফন করা হবে।

এদিকে শহরতলির ইব্রাহিমপুর গ্রামে কবরস্থানে কোনো শুকনো জায়গা না থাকায় মরদেহ দাফন করা যাচ্ছে না, এমন খবর পেয়ে বুধবার কোস্টগার্ডের একটি দল সেখানে লাশ উদ্ধার করতে যায়।

এসময় কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা লে. সাব্বির আলম বললেন, বানভাসিদের উদ্ধার ও ত্রাণ প্রদানে কাজ করছে কোস্টগার্ড। বুধবার সকালে আমরা খবর পাই লাশ দাফনের জায়গা না পেয়ে ছয়দিন ধরে লাশ নিয়ে বসে আছে দুটি পরিবার। এ খবর পেয়ে আমরা তাদের সহায়তা করতে যাই। গিয়ে দেখেছি কবরস্থানের একটি উচুঁ অংশ থেকে পানি নেমেছে এবং একজনের লাশও দাফন হচ্ছে। আরেকজনের লাশ দাফনে আমরা সহায়তা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত