সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ জুলাই, ২০২২ ১২:৫৭

কুলাউড়া পৌর এলাকায় দীর্ঘ জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে ১০ সহস্রাধিক মানুষ

পানি নিষ্কাশনসহ শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের দাবি

মো. শাহ আলম সুমন, কুলাউড়া

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভায় বন্যার পানিতে এবারই প্রথম দীর্ঘ জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন ৫টি ওয়ার্ডের ১০ সহস্রাধিক মানুষ। গত শুক্রবার (১জুলাই) থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও এসব এলাকায় খুবই ধীরগতিতে পানি নামছে। এতে জলাবদ্ধ অবস্থায় আরও বেশ কয়েকদিন থাকতে হবে এমন শঙ্কায় এলাকার বাসিন্দাদের।

সরেজমিন পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার মাগুরা ও থানা রোড, সাদেকপুর, সোনাপুর ও বেহালা, টিটিডিসি এরিয়া, উত্তরবাজার, আহমেদাবাদ, নতুনপাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দেখিয়ারপুর, শিবির, মনসুর এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এলাকার রাস্তাঘাটে ২ থেকে ৩ ফুট পানি। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেকে বাসা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছেন। বন্যার পানি নামতে ধীরগতি হওয়ায় এসব এলাকায় দীর্ঘ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সাথে পানি পঁচে দুর্গন্ধ হওয়ায় ভবনে থাকা বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। ১৫দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দা আতিকুর রহমান, শিপন দেব, মাহবুব আলম, শাকির হোসেন, মনজুরুল চৌধুরী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিপা রহমান বলেন, এইবার-ই প্রথম কুলাউড়া পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে বন্যায় সাদেকপুর, সোনাপুর ও বেহালা এলাকা প্লাবিত হয়েছিলো। ৪/৫ দিন পরে সেই পানি নেমেও যায়। কিন্তু এইবার এত দীর্ঘসময় পানি আটকে জলাবদ্ধতা হয়ে গেছে। পানি পঁচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো কোমর ও হাঁটু পানির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। পঁচা পানিতে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হচ্ছে। দুইদিন ধরে পানি কমছে, তবে ধীরগতিতে কমছে। যেভাবে পানি নামছে তাতে আরও ৮/১০ দিন লাগবে পানি কমতে।

তারা বলেন, হাওর বিলের পানি উপচে এরকম বন্যা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি ও পৌর এলাকায় যাতে হাওরের উপচে পড়া পানি না ঢুকতে সেজন্য বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া উচিত পৌর কর্তৃপক্ষকে।

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম শামীম বলেন, এবারের বন্যায় সর্বকালের চেয়ে দীর্ঘসময় পৌর এলাকাসহ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। পৌর এলাকায় আগে কখনো এত দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ থাকতে হয়নি। পৌরসভার অনেক ড্রেন রয়েছে যেগুলো খুবই ছোট এবং একটির সাথে অন্য ড্রেনের সংযোগ নেই। এখন থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে এলাকার সবকটি ড্রেন প্রসস্থ ও সবকটি ড্রেনের সংযোগ স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজনীয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইয়াকুব তাজুল- মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, যেভাবে পরিবেশ দূষণ ও বৈশ্বিক বৈরী আবহাওয়া দেখা দিচ্ছে এবং হাকালুকির হাওরের গভীরতা কমছে ও নদী-খাল ভরাট হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতেও এমন বন্যা দেখা দিবে। অতিবৃষ্টি ও উজান ঢলে হাওরতীরবর্তী এলাকাসহ কুলাউড়া পৌর এলাকায় বন্যা হতে পারে এরকম। দীর্ঘদিন ধরে পানি আটকে থাকায় এখন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, কুলাউড়া পৌরসভার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। পৌর এলাকার মরা গুগালিছড়া খালটি দখল-দূষণে প্রায় বিলীনের পথে। অনেক ড্রেন রয়েছে যেগুলো খুবই সংকীর্ণ ও পুরনো এবং অনেক ড্রেনের যেদিক দিয়ে পানি নামবে সেটিও বন্ধ। তাই পানি আটকে থাকে। মরা গুগালিছড়া খালটি উদ্ধার ও খনন করা খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়া পুরনো ড্রেন সংস্কারসহ প্রসস্থ করতে হবে পানি নিষ্কাশনের জন্য। পাশাপাশি শহর রক্ষাবাঁধের প্রয়োজনীয়তা চিন্তা করা উচিত।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, মরা গুগালিছড়া খালটি খননের জন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হবে। পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। এবারের শহর রক্ষাবাঁধের বিষয়টি এখন গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের কাছে আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাঁধের বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাদা প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত