নিজস্ব প্রতিবেদক:

০৩ জুলাই, ২০২২ ২১:৫৭

বড়লেখায় টিলা ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুই সড়ক ১৪ দিন পর চালু

ইউপি চেয়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগ

এস্কাভেটর দিয়ে সাতকরাকান্দি-খাগালা-ছোটলেখা বাজার সড়কের টিলা ধসে পড়া মাটি সরানোর কাজ চলছে।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ছোটলেখা বাজার-ষাটমাপার ও সাতকরাকান্দি-খাগালা-ছোটলেখা বাজার সড়কের প্রায় ১৫টি জায়গায় গত ১৭ জুন অতি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই সড়কগুলোর উপর মাটি থাকায় উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন। সড়ক দিয়ে প্রায় ১৪ দিন বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল।

এই অবস্থায় সরকারি কোনো উদ্যোগের অপেক্ষা না করে ইউপি চেয়ারম্যান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এলাকাবাসী সড়ক থেকে টিলা ধসের মাটি সরিয়েছেন। গত শুক্রবার (১ জুলাই) সড়কগুলো থেকে মাটি সরিয়ে ফেলার কাজ শেষ হয়। গত শনিবার (২ জুলাই) থেকে এসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুন রাতে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছোটলেখা বাজার-ষাটমাপার ও সাতকরাকান্দি-খাগালা-ছোটলেখা বাজার সড়কের প্রায় ১৫টি জায়গায় টিলার মাটি ধসে পড়ে। এতে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাল বন্ধ হয়ে যায়। পায়ে চলারও অবস্থা থাকেনি। ছোটলেখা বাজার-ষাটমাপার সড়কের ১২টি জায়গায় ও সাতকরাকান্দি-খাগালা-ছোটলেখা বাজার সড়কে ৩টি জায়গায় টিলার মাটি ধসে সড়কে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী অনেকটাই গ্রামের মধ্যে আটকা পড়েন। এই সড়কগুলো দিয়ে ৪,৫,৭,৮ ও ৯ ওয়ার্ডের মানুষ উপজেলা সদরে আসা যাওয়া করেন। এছাড়া ৩টি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া করেন। সড়ক দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীদের অনেক পাকা ফল নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা ক্ষেতের সবজি উপজেলা সদরের বাজারে নিতে পারেননি। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাতকরাকান্দি সমাজকল্যাণ সংস্থা ও এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে পায়ে চলার পথ তৈরি করেন। কিন্তু যানচলাচল চালু করার অবস্থা হয়নি। এই অবস্থায় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল স্থানীয় ইউপি সদস্য, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাতকরাকান্দি সমাজকল্যাণ সংস্থা এবং এলাকার জনসাধারণকে সাথে নিয়ে সড়কের উপর থেকে মাটি অপসারণের কাজ শুরু করেন। গত মঙ্গলবার (২৮ জুন) এস্কাভেটর দিয়ে মাটি সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়। গত শুক্রবার (১ জুলাই) সড়কগুলো থেকে মাটি সরিয়ে ফেলার কাজ শেষ হয়।

এ কাজে এলাকার লোকজন কেউ সড়কের উপর পড়ে থাকা মাটি সরানোর কাজে কোদাল নিয়ে অংশ নিয়েছেন। কেউ বাড়ি থেকে বাঁশ এনে রাস্তার পাশে বেড়া (আড়া) দিতে সহযোগিতা করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত উদ্যোগে এস্কাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) ভাড়া এনে মাটি সরানোর কাজ করিয়েছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

সাতকরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কাঁঠাল ব্যবসায়ী রয়ফুল ইসলাম বলেন, রাস্তা বন্ধ হওয়ায় আমরা কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ি। আমাদের অনেক পাকা কাঁঠাল গাছে ও ঘরে নষ্ট হয়েছে। বাজারে নিতে পারিনি। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেওয়ায় এস্কাভেটর দিয়ে রাস্তার মাটি সারানো হয়েছে। এখন গাড়ি চলাচল করছে।

সাতকরাকান্দি সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি বিপ্লব পুরকায়স্থ ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমদ বলেন, টিলা ধসে রাস্তা বন্ধ হওয়ার পর আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান সরেজমিনে দেখে গেছেন। এলাকাবাসীর সাথে কথাও বলেছেন। কিভাবে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা যায়। এরপর আমরা প্রথমে পায়ে চলার ব্যবস্থা করি। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় কাঁঠাল ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। টিলায়-বাড়িতে তাদের কাঁঠাল ও মৌসুমী ফল নষ্ট হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে এস্কাভেটর দিয়ে রাস্তার মাটির কাজ করিয়েছেন। এখন গাড়ি চলছে। তিনি উদ্যোগ না নিলে ব্যবসায়ীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এলাকার ৩টি জায়গায় এস্কাভেটরে প্রায় ১৬ ঘন্টা কাজ করে রাস্তার মাটি সরিয়েছে।

বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল বলেন, ‘ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে টিলা ধসে আমার ইউনিয়নে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ১৫টি জায়গায় (টিলা ধসে) রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষ খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। মাটি ধসে পড়ায় রাস্তা দিয়ে পায়ে চলারই উপায় ছিল না। এলাকার লোকজন প্রথমে পায়ে চলার পথ করেন। এরপর নিজ উদ্যোগে ইউপি সদস্য, এলাকার বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে এস্কাভেটর দিয়ে কাজ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছি। এস্কাভেটর দিয়ে কাজ করানোসহ প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত