নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:১৮

‘শেখের বেটির’ সাথে কথা বলতে উদগ্রীব চা শ্রমিকরা

‘শেখের বেটি আমাদের সাথে কথা বলবে, এ তো আমাদের পরম আনন্দের বিষয়। আমরা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। আমাদের দুঃখ-কষ্টের কাহিনি তারে শোনাব।’

কথাগুলো বলার সময় খুশির ঝিলিক দেখা গেল বৃদ্ধা শান্তা বারিকের চোখে-মুখে। নিজের বয়স জানেন না সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানের এই শ্রমিক। বলেন, ‘চেহারা দেখে আন্দাজ করে নেন।’

তবে নিজের বয়স না জানলেও যুদ্ধের কথা স্পষ্ট মনে আছে তার। বলেন, ‘শেখ মুজিবের ডাকে সবাই যুদ্ধে গেছিল। মুজিব তো এই দেশ বানাইলেন। চা শ্রমিকদের জন্যও অনেক কিছু করেছেন তিনি।

‘আর এইবার তার মেয়ে, দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাথে কথা বলবেন- এটা সব চা শ্রমিকের জন্য আনন্দের।’

একইভাবে আনন্দিত আলীবাহার চা বাগানের শ্রমিক মরিয়ম বেগমও। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলতে পারব এটা তো আমাদের জীবনের একটা বড় সৌভাগ্য। আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা যে তিনি ভেবেছেন, এই জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’

শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলবেন। সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে চা শ্রমিকরা যুক্ত হবেন তার সঙ্গে।

সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকার গলফ মাঠ থেকে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবেন। দুপুর থেকেই হাজারো চা শ্রমিক এই মাঠে জড়ো হবেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

এই আয়োজন সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিন জেলার চা শ্রমিকদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক বিজন মুন্ডা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের দুঃখের কথা শোনার আর কেউ নাই। আমরা অনেক দিন ধরেই তার সাথে কথা বলার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অবশেষে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। শনিবার দেশের সব চা শ্রমিকের জন্য এক স্বপ্নের দিন। এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ পাবে তারা।’

দীর্ঘ ১৮ দিন ধর্মঘট পালনের পর ২৭ গত আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বাড়ান। এতে চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটে। ১৭০ টাকা মজুরিতে ২৮ আগস্ট থেকে কাজে ফেরেন শ্রমিকরা। তবে ধর্মঘটের শুরু থেকেই চা শ্রমিকরা সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে তিনি সরাসরি নির্দেশ দিলেই কাজে ফিরবেন বলেও জানিয়েছিলেন জীবনমানের সব সূচকেই পিছিয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠী।

অবশেষে সেই আশা পূর্ণ হতে যাচ্ছে চা শ্রমিকদের। প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন তাদের সঙ্গে।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘এখানকার চা শিল্পের প্রায় ১৬৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। সহস্রাধিক শ্রমিক এখানে জড়ো হলেও সবাই কথা বলতে পারবেন না। সিলেট থেকে তিনজন কথা বলতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। আমরা তিনজনের তালিকা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরবেন জানিয়ে রাজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের বিষয়ে আন্তরিক। আশা করছি তিনি আমাদের দাবি পূরণে উদ্যোগী হবেন।’

শনিবার গলফ মাঠের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের পাশাপাশি চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান রাজু।

প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে সিলেটের জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। অভাব-অভিযোগ শুনবেন। আয়োজনটি সফল করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত