হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:

১৯ নভেম্বর, ২০২২ ২২:২৪

সকালে হত্যা, বিকেলে ‘খুনিরাই’ উদ্ধার করেছিল মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ

হবিগঞ্জের বানিয়াচং, ‘চাবি’র সূত্রে বের হলো খুনের রহস্য

একটি চাবি’র সূত্র ধরেই হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে মাদ্রাসা ছাত্র আকরাম খান (৯) খুনের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।

এমন দাবি পুলিশের। এঘটনায় জড়িত ৩ মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিহত আকরাম খান উপজেলার মক্রমপুর মরহুম সামায়ুন কবির হাফিজিয়া এতিমখানার ছাত্র এবং একই গ্রামের মৃত দৌলত খানের ছেলে।

খুনের রহস্য উদঘাটন ও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- মরহুম সামায়ুন কবির হাফিজিয়া এতিমখানার ছাত্র ফখরুল মিয়া (১৬), ফয়েজ উদ্দিন (১৩) ও জাহেদ মিয়াকে (১৫)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ১৬ নভেম্বর বিকেলে আকরামকে না পাওয়ায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এসময় তাকে খোঁজে বের করার অজুহাতে পুকুরে ডোবানো নৌকা সেচ করতে পুকুরে যায় ফখরুল মিয়া, জাহেদ মিয়া, ফয়েজ উদ্দিন। যে নৌকায় আকরামের লাশ পাওয়া যায়। সেখান থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৩ হত্যাকারীই আকরামের লাশ উদ্ধার করে।

বানিয়াচং থানার ওসি অজয় দেব বলেন,‘গত ১৬ নভেম্বর মরহুম সামায়ুন কবির হাফিজিয়া এতিমখানার পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে ডুবানো নৌকার তল থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আকরাম খানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নামে পুলিশ। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে নিহত আকরাম খানের নিকট একটি চাবি ছিল।

‘যেই চাবি দিয়ে এতিমখানার অনেক ছাত্রদের ট্রাংক খোলা যেত। এছাড়াও মাদ্রাসার যে কারো কিছু চুরি হলেই সকলে আকরামকে সন্দেহ করতো। সেই সুত্রধরে এগিয়ে যেতে থাকে পুলিশ।’

ওসি আরও বলেন, ‘তদন্তের এক পর্যায়ে একই মাদ্রাসার ছাত্র ফখরুল মিয়া, ফয়েজ উদ্দিন ও জাহেদ মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা তিনজনই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।’

হত্যায় জড়িত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘হত্যাকান্ডের কয়েকদিন আগে ফখরুল মিয়ার ট্রাংক থেকে দুই দফায় ৬০টাকা ও ৫০টাকা চুরি হয়। চুরি হওয়া টাকা খুঁজে না পেয়ে ফখরুল মিয়া, জাহেদ মিয়া ও ফয়েজ উদ্দিন জানতে পারে আকরাম খানের নিকট একটি তালা খোলার চাবি রয়েছে। এই চাবি দিয়ে যে কোনো ট্রাংকের তালা খোলা যায়।

‘এরপর থেকেই তাদের সন্দেহ হয় আকরাম খানই তাদের টাকা চুরি করেছে। সন্দেহ থেকেই তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আকরামকে সুযোগ পেলে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে তারা পরিকল্পনা করে।’

‘পরিকল্পান অনুযায়ী ১৬ নভেম্বর সকালে তারা কৌশলে আকরাম খানকে মাদ্রাসার পেছনের একটি পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা হত্যার উদ্দেশ্যে রশি দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এক পর্যায়ে আকরাম চিৎকার শুরু করলে তার মুখ চেপে ধরা হয়। এরপর ইট দিয়ে তার মাথায় একাধিক আঘাত করে। এতেও মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় আকরামকে ধরাধরি করে পুকুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

‘সেখানে তাকে পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ পানিতে ফেলে মাদ্রাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে তারা।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত