নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:১৬

সিলেট থেকে ঢাকামুখী যাত্রী কমে অর্ধেক, হয়রানির অভিযোগ

সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ফাঁকা বাস কাউন্টার। বৃহস্পতিবার বিকেলের ছবি

‘অন্য বৃহস্পতিবারের বিকেল থেকে কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় লেগে যায়। টিকিট দিতে ঘাম ছুটে যায় কর্মীদের। যাত্রীদের চাপ সামলাতে বাসের সংখ্যাও বাড়াতে হয়। অথচ আজ একেবারে বিপরীত চিত্র। যাত্রী একেবারেই নেই, টিকিটও তেমন বিক্রি হচ্ছে না।’

এভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেলে কাউন্টারের অবস্থা জানাচ্ছিলেন সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরের ইউনিক বাস সার্ভিস কাউন্টারের কর্মী সাইফুল আলম। বুধবার থেকেই ঢাকাগামী যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে বলে জানান তিনি।

যাত্রীর সংখ্যা কমেছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ঝামেলা চলছে। ১০ তারিখে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আরও গণ্ডগোল হতে পারে, এই ভয়ে মানুষজন ঢাকা যাচ্ছে না।’

সিলেট নগরীর প্রবেশমুখ হুমায়ুন রশীদ চত্বরে পাশাপাশি ইউনিক, হানিফ, এনা, শ্যামলী, সোহাগ, লন্ডন এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন বাসের কাউন্টার রয়েছে। বিকেলে সবগুলো কাউন্টার প্রায় ফাঁকা দেখা যায়, ছিল না যাত্রীদের তেমন আনাগোনা।

তবে সিলেট বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পথে পথে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকায় গমনেচ্ছু যাত্রীরাও পথে বাধার মুখে পড়ছেন।

বাস কাউন্টার থেকেই যাত্রীদের ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রীরা টিকিট কেনার জন্য কাউন্টারে গেলে বাস কাউন্টারগুলো থেকে তাদের ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া পথে পথে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাধা-বিপত্তি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমরা কেউ সংঘবদ্ধভাবে ঢাকায় যাচ্ছি না। সবাই ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন। ধারণা করছি ব্যক্তিগতভাবেই কয়েক হাজার নেতাকর্মী ১০ ডিসেম্বরের আগেই ঢাকায় পৌঁছাবেন।’

এদিকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের আগেই বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। সমাবেশকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শ্যামলী পরিবহনের সোবাহানীঘাট কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী রাশেদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (শুক্রবার) আমার ফ্লাইট। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। রাতের বাসে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু রাতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় কিনা এই ভয়ে দিনেই চলে যাচ্ছি। তারপরও আতঙ্কে আছি।’

বাসের সংখ্যা কমলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সিলেট থেকে বাস চালাচল স্বাভাবিক ছিলো। বাস বন্ধ করার এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।

যাত্রী অর্ধেক কমে গেছে জানিয়ে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রতিদিনই বিভিন্ন কোম্পানির ২০ থেকে ২২টি বাস সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বাসের সংখ্যা আরও বাড়াতে হতো। কিন্তু আজ ও কাল কোনো কোম্পানিরই ১০টি বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।’

ঢাকামুখী যাত্রী কমেছে, পথে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তবে বাস চলাচলে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো ঝামেলা নেই। কেউ বাধাও দিচ্ছেন না। সব স্বাভাবিকই আছে। তবে শুনেছি ভৈরব পেরোনোর পর বাস থামিয়ে পুলিশ যাত্রীদের তল্লাশি করছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বাসের সুপারভাইজার বলেন, ‘ভৈরবের পর একাধিক স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বা কাউকে সন্দেহ হলে তাকে আর ঢাকা যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’

তবে কাউন্টার থেকে যাত্রীদের ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ। তিনি বলেন, ‘কোনো যাত্রীকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না। আমরাই বরং যাত্রী পাচ্ছি না।’

বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের হয়রানি বা জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেউ। তবে পথে গাড়ির কাগজপত্র পুলিশ চেক করছে বলে শুনেছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত