সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ ২০:৫৩

সিলেটে ওএমএসের লাইন থেকে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে

সিলেট নগরের সুরমা মোড়ে ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়েছিলেন কনা মিয়া (৫৫)। তার সামনে অন্তত ১০০ মানুষ। প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সরে গেলেন তিনি। পরে হাঁটা শুরু করলেন ফুটপাত ধরে। খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) চাল কেনার দীর্ঘ লাইন দেখেই ফিরে যান তিনি। এ দৃশ্য আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকের। ওএমএসের চাল কিনতে এসে দীর্ঘ সারি দেখে প্রতিদিন কনা মিয়ার মতো অনেকে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।

কনা মিয়া পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টায় এসে সারিতে দাঁড়িয়েছিলাম। এর আগেই অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও আমার সিরিয়াল না আসায় ফিরে যাচ্ছি। আরেকটু বিলম্ব হলে দিনমজুরের কাজ জুটবে না। এক দিন কাজ না পেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই সারি ছেড়ে কাজের সন্ধানে বের হয়েছি।’

কনা মিয়া যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন সুরমা মোড়ের ওএমএসের চাল বিক্রয় কেন্দ্রে চাল নিয়েছেন ২০৭ জন। তাদের বাইরে আরও শতাধিক মানুষ দাঁড়ানো। তবে কিছুক্ষণ পরপর ব্যাগ হাতে যুক্ত হচ্ছিলেন আরও মানুষ। তারা জানান, প্রতিদিন দাঁড়ালেও চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে খালি হাতেই বাড়ি ফেরেন। তবে কতজন এভাবে ফিরে যাচ্ছেন, এর কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং ওএমএসের ডিলারদের কাছে।

সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭ জন নিবন্ধিত ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে প্রতিদিন ১৯ জন ডিলার এসব পণ্য বিক্রি করেন। এর মধ্যে ১২টি ডিলার দোকানে চাল ও আটা বিক্রি করেন। ট্রাকে করে আরও সাতটি স্থানে ওএমএসের চাল বিক্রি করেন সাতজন ডিলার। শুক্রবার ও শনিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচদিন চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। ট্রাকে প্রতিদিন ২ টন চাল ৪০০ জনের কাছে বিক্রি হয়। একেকজন ৩০ টাকা কেজিতে ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। অন্যদিকে ডিলার দোকানে দেড় টন চাল ও এক টন আটা বিক্রি করা হয়।

একাধিক ডিলার জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে চাল বিক্রি শুরু হয়ে চলে বেলা একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। তবে প্রতিদিনই চাল না পেয়ে অনেকে খালি হাতে ফেরেন। প্রতি ডিলার দোকান ও ট্রাকের সামনে থাকা সারিতে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। এতে ডিলারদেরও কিছুই করার থাকে না।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকায় ডিলার সাজ্জাদুর রহমান ওএমএসের চাল বিক্রি করছিলেন। তখন পর্যন্ত ২৩৮ জনের কাছে চাল বিক্রি করা হয়েছিল। লাইনে তখনো দেড় শতাধিক পুরুষ ও নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানেও ব্যাগ হাতে অনেকে নতুন করে সারিতে দাঁড়াচ্ছিলেন।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরের খাসদবির এলাকার আম্বিয়া বেগম চাল নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে এসে সোয়া ১১টার দিকে তিনি চাল পেয়েছেন। গতকাল রোববার লাইনে দাঁড়িয়েও তাকে চাল না নিয়েই বাড়িতে ফিরতে হয়েছিল। ছয়জনের পরিবারে পাঁচ কেজি চাল দিয়ে তার দুই দিন চলে বলে জানিয়ে আম্বিয়া বলেন, সামনেই রমজান মাস। তখন নিত্যপণ্যের দাম আরও চড়া থাকবে। সে সময় ওএমএসের চাল বিক্রি না হলে বেকায়দায় পড়তে হবে।

লাইনের পেছন দিকে থাকা হেলেমা বেগম (৪০) বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে চাল পাবেন কি না, বুঝতে পারছেন না। যে টাকা তার সঙ্গে আছে, তা দিয়ে ওএমএসের চালসহ বাজার থেকে অন্য কিছু পণ্য কিনতে পারবেন। তবে চাল না পেলে শুধু লবণ-ভাত খেতে হবে। কারণ, যে টাকা তার আছে, তা দিয়ে অন্য বাজার করতে পারবেন না।

ট্রাকে করে নগরের আম্বরখানা এলাকায় চাল বিক্রি করা ডিলার সাজ্জাদুর রহমানের ছেলে সামছুর রহমান বলেন, ট্রাক আসার আগেই অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গে হুলুস্থুল লেগে যায়। অনেক সময় বাকবিতণ্ডা এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তবে প্রতিদিনই সারিতে ৪০ থেকে ৫০ জন অবশিষ্ট থাকেন, যাদের চাল দেওয়া সম্ভব হয় না।

ডিলার বিজয় স্টোরের পরিচালক বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, ২৭ জন ডিলার থাকলেও প্রতিদিন বিক্রি করতে পারেন ১৯ জন ডিলার। এতে সব ডিলারের ওপর চাপ পড়ে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন গঠিত ১২টি ওয়ার্ডসহ এখন ৩৯টি ওয়ার্ড হয়েছে। আগে ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। অথচ ডিলারের সংখ্যা বাড়েনি। এলাকা বাড়ায় চাহিদাও বেড়েছে।

সিলেট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়ন জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘চাহিদা বাড়লেও নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকায় ডিলার বাড়ানো যাচ্ছে না। ডিলার বাড়ানোর বিষয়টি তাদের হাতে নেই। বিষয়টি দেখভাল করে খাদ্য অধিদপ্তর, এটা তাদের অবহিত করা হয়েছে। সামনের রমজানে ওএমএসের চাল বিক্রয় কর্মসূচি থাকলে চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ খবর প্রথম আলোর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত