জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

২৮ মার্চ, ২০২৩ ১৮:৩৭

‘একজন বিসিএস ক্যাডারকে কীভাবে ডাকতে হয় জানেন না?’

গোলাপগঞ্জে মৎস্য কর্মকর্তাকে ভাই ডাকায় ক্ষেপে গেলেন উপ সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা

সরকারি কর্মকর্তাদের সম্বোধন নিয়ে বিতর্ক যেন শেষই হচ্ছে না। এবার এই বিতর্ককে আরেকটু উসকে দিলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জের এক মৎস্য কর্মকর্তা। ওই উপজেলার এক সাংবাদিক মৎস্য কর্মকর্তাকে ভাই সম্বোধন করায় আপত্তি জানান একই কার্যালয়ের উপসহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসে এমনটি ঘটে।

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে গোলাপগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবে সদস্য ফাহিম আহমদ একটি কাজে উপজেলা মৎস্য অফিসে যান। এসময় মৎস্য অফিসার হাসিবুর রহমানকে না পেয়ে তিনি উপসহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বলেন, 'ভাই (মৎস্য অফিসার হাসিবুল হাসান) কোথায় আছেন'?

এসময় 'ভাই' সম্বোধন নিয়ে আপত্তি জানান মিজানুর রহমান। ক্ষেপে গিয়ে তিনি বলেন, একজন বিসিএস ক্যাডারকে কীভাবে ডাকতে হয় আপনি জানেন না?

এসময় সাংবাদিক ফাহিম আহমদের সাথে থাকা এটিএন বাংলা ইউকের গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ ও দৈনিক ভোরের কাগজ ও সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরের গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহিদ উদ্দিনও কী ডাকতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিশারি অফিসার ডাকবেন।

এ বিষয়ে উপসহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা একজন বিসিএস কর্মকর্তা। তাকে ভাই ডাকা কেমন দেখায়, শালীনতার মধ্যে পড়ে না।

ভাই ডাকা কি অশালীন বা বিসিএস ক্যাডারকে ভাই ডাকা কি নিষেধ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক ফাহিম আহমদ জানান, মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাকে না দেখে উপসহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বলি, 'ভাই কোথায়?' এ কথা বলতেই তিনি ক্ষেপে যান। বলেন, ভাই কেন বলছেন। বিষয়টির পর সাথে থাকা আরও দুজন সহকর্মী সাংবাদিকও এর প্রতিবাদ জানান।

ফাহিম বলেন, উনারা আমাদের সাথে যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ জনগণের সাথে কী ধরনের আচরণ করছেন তা জানা নেই।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এরআগে ‘স্যার না বলায়’ রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ক্ষুব্ধ আচরণ করেছেন—এমন অভিযোগ তুলেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন। অবশ্য ডিসি চিত্রলেখা নাজনীন সেদিন দুঃখ প্রকাশ করে ওই ঘটনার ইতি টানলেও ফেসবুকে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘স্যার’ ডাকা না–ডাকা নিয়ে এখনো চলছে তুমুল আলোচনা।

এমন প্রেক্ষাপটে এ নিয়ে গত শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তাদের স্যার বা ম্যাডাম ডাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভদ্রতার খাতিরে অনেকে স্যার বা ম্যাডাম ডাকেন। কিন্তু এটি ডাকা বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেউ যদি আপা বা ভাই ডাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। এতে মাইন্ড করারও কিছুই নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক—এই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের কথা মনে করিয়ে দেন। যেখানে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত