চুনারুঘাট প্রতিনিধি

২৮ মার্চ, ২০২৩ ২২:৪৬

শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের উসমানপুর এলাকায় প্রায় ৭ বছর আগে বিশাল পাহাড়ি জমি ক্রয় করে শিল্প কারখানা স্থাপন করা হয়। এখানে মুরগী থেকে ডিম উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি মুরগীর বিষ্ঠা থেকে উপৎপাদন হচ্ছে সার।

এই কারখানার সৃষ্ট বর্জ্য ও নিষ্কাশিত দূষিত পানিতে বিনষ্ট হচ্ছে এলাকার খাল-বিল, নদী-নালার পানি, মাছ ও কৃষি জমি। উৎকট দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসী। মুরগির বর্জ্য ও বিষাক্ত পানির দ্বারা আশেপাশের গ্রামের পরিবেশ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই কারখানার ভেতর থেকে কালো পানি প্রথমে ধলাজাই খালে প্রবেশ করে। পরে ভূইছড়া হয়ে খোয়াই নদীতে কালো পানি প্রবেশ করছে। এমনকি কৃষকদের ধানের জমিতে এ পানি প্রবেশ করছে।

আলাপকালে ধলাজাই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন, আব্দুল হামিদ, রহিমা খাতুন, জায়েদা খাতুনরা বলেন, কারখানা করার পূর্বে ওই পাহাড়ি জমিতে নানা ধরণের ফসল চাষ করা হতো। এখন ডিম ও সার উৎপাদন হচ্ছে। কারখানার ভেতর থেকে কালো পানি বেরুচ্ছে। এ পানি ধলাজাই খাল, বিল থেকে আমাদের জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে।

তারা বলেন, ভূইছড়া হয়ে খোয়াই নদীতে প্রবেশ করছে বিষাক্ত পানি। কোম্পানির বিষাক্ত পানিতে প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য তৈরি করে। কৃষকরা এসব বর্জ্যের পানি থাকায় কৃষি জমিতে কাজ করতে পারছেন না।

তারা আরো বলেন, আমরা কৃষির উপর নির্ভর। কৃষি কাজে খালের পানি ব্যবহার করা হত। বর্তমানে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারখানার কালো পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে স্থানীয়রা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

প্রায় ৭ বছর পূর্বে জমি ক্রয় করে কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে প্রায় দুই বছর ধরে কারখানায় উৎপাদন চলছে। যত দিন যাচ্ছে কারখানা থেকে কালো পানি অধিকহারে বেরুচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে দুর্গন্ধ। শুধু তাই নয়, মশা ও মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাল থেকে কালো পানি জমিতে প্রবেশ করায় কাজ করতে গিয়ে কৃষকরা বিরাট সমস্যার মুখে পড়েছেন।

স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বলেন, কালো পানির দুর্গন্ধের পাশাপাশি এর বাতাস লাগলেই শরীরে চুলকানি শুরু হয়। তাই স্কুলে যেতে মন চায় না। স্থানীয়রা দ্রুত এর প্রতিকার চেয়েছেন।

এ ব্যাপারে সাইনবোর্ডবিহীন ওই কারখানার ব্যবস্থাপক চঞ্চলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে মুরগী থেকে ডিম ও মুরগীর বিষ্ঠা থেকে জৈব সার উৎপাদন হয়। কালো পানির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, মিডিয়ার কাছে বক্তব্য দিতে হলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান টুকুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা মুঠোফোন বা সারাসরি বক্তব্য দেই না। অভিযোগ করা হলে খতিয়ে দেখা হবে।  

অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা  হবে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানও।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, লোকজনের বসবাসের আশপাশে কলকারখানা হয় না। নিয়মানুযায়ী বিষাক্ত বর্জ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাইরে নির্গত করতে হয়। কিন্তু অনেক শিল্প কারখানা সেই নিয়ম অনুসরণ না করে বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিক্যাল সরাসরি জলাভূমিতে ছেড়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত