নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০২:১৯

সিলেটের নাট্যাঙ্গনে আমিনুল ইসলাম লিটনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত

শিশু ও নারী নিপীড়নের অভিযোগে এবার সিলেটের নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়েছেন সংস্কৃতিকর্মী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের জরুরি সভায় লিটনকে সিলেটের নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি।

লিটন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি। নারী ও শিশু নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর সংগঠনটি সম্প্রতি তাকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্মিলিত নাট্যপরিষদ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, কথাকলি সিলেট-এর সদস্য আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদমাধ্যমে শিশু ও নারীর প্রতি যৌন হেনস্থা ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অডিও ক্লিপ প্রকাশ হওয়ায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনকে সর্বসম্মতিক্রমে নাট্যাঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাত দশটায় নাট্য পরিষদের মহড়া কক্ষে নাট্য পরিষদের নীতিনির্ধারণী পরিষদের আহবানে জরুরি সাংগঠনিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন। অন্যতম পরিচালক অর্ধেন্দু কুমার দাশের পরিচালনায় সভায় সদস্য সংগঠনসমূহের লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনার মাধ্যমে নাট্যকর্মীদের সুরক্ষায় বিশেষ সেল ও ভিকটিম সাপোর্ট কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটনের বিষয়ে কথাকলি সিলেট-এর লিখিত জবাব নাট্য পরিষদের কাছে সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদেরকে পরবর্তী চিঠি প্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন বিষয়ে সন্তোষজনক সুস্পষ্ট জবাব ও গঠনতান্ত্রিক মোতাবেক কেন সংগঠনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ হবে না তা জানতে চেয়ে চিঠি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সিলেটের নাট্যাঙ্গনকে সর্বাবস্থায় গতিশীল ও সকল নাট্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ ক্ষেত্র তৈরি করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আগামীতে আরও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদভুক্ত সদস্য সংগঠন সমূহের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তব্য দেন পরিষদের অন্যতম পরিচালক অনুপ কুমার দেব, সাবেক পরিচালক ও নান্দিক নাট্যদলের প্রতিনিধি কনোজ চক্রবর্তী বুলবুল, সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কথাকলি সিলেটের সভাপতি শামসুল বাসিত শেরো, সাবেক সহসভাপতি খোয়াজ রহিম সবুজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, উদীচী সিলেটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. অভিজিৎ দাস জয়, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু, দর্পণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ পারভেজ বাবু, নাট্যায়ন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক এখলাছ আহমেদ তন্ময়, দিগন্ত থিয়েটারের দিবাকর সরকার শেখর, নবশিখা নাট্য দলের সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি দে, লিটল থিয়েটার, সিলেটের প্রতিনিধি দেবাশীষ দেবু, থিয়েটার সিলেটের প্রতিনিধি কামরুল হক জুয়েল, ফারজানা সুমি, দিগন্ত থিয়েটার প্রতিনিধি কামরুন নাহার শাওন, নগরনাটের প্রতিনিধি উজ্জ্বল চক্রবর্তী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, আমিনুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অবমাননকার মন্তব্যের অভিযোগ তুলেন তার থিয়েটার কথাকলি-সিলেটেরই এক নারী কর্মী। এনিয়ে আলোচনার মধ্যে আরও কয়েকজন নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিটনের বিরুদ্ধে হেনস্তা ও নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। এরমধ্যে কয়েকজন শিশু বয়সে নিপীড়িত হওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন। এরমধ্যে দুটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলো আমিনুল ইসলাম লিটনের সাথে ভুক্তভোগী দুই তরুণীর আলাপ বলে দাবি করা হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপে পুরুষ কণ্ঠে নিপীড়নের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে শোনা যায়। যদিও গত রোববার এক ফেসবুক পোস্ট আমিনুল ইসলাম লিটন এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া অডিও ক্লিপ তার নয় দাবি করে বলেছেন, এগুলো তার কণ্ঠের মতো করে এডিট করা হয়েছে।

আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে সিলেটের একাধিক সংগঠন আমিনুল ইসলাম লিটনের লিটনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়। এই আলোচনার মধ্যে গত শনিবার (৮ এপ্রিল) রাতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় আমিনুল ইসলাম লিটনকে। লিটনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোমবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় নাগরিকবন্ধন ও সমাবেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত