ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ

০৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:৫২

শান্তিগঞ্জে পঞ্চাশ ভূমিহীন পরিবারের স্বপ্ন পূরণে তৈরি হচ্ছে ঘর

দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সেমি পাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশাল এ প্রকল্প গ্রহণের পর দেশব্যাপী সফলভাবে এর বাস্তবায়নও করে যাচ্ছে তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে ৪শ’ ৩টি ঘর সুবিধা ভোগীর মাঝে হস্তান্তরও করা হয়েছে। এতে ব্যপক খুশি ঘর পাওয়া মানুষজন।

সর্বশেষ শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউয়নিয়নের দামোদরতপী পয়েন্ট সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে দেড় একর সরকারি খাস ভূমির উপর আরও ৫০টি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করছে শান্তিগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় বা পিআইও অফিস। ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরগুলো নির্মাণ করছে তারা।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টিনের চালসহ সেমি পাকা প্রতিটি ঘর তৈরিতে ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭শ’ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে। দামোদরতপীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০ ঘরে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আস্তর করা, টিন লাগানোসহ কিছু কাজ এখনো বাকী। তবে ডিসেম্বরের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে পিআইও অফিস।

সুবিধাভোগী প্রতিটি পরিবার পাবেন ২টি শয়নকক্ষ, ১টি রান্না ঘর। ঘরের পাশেই থাকবে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন। ল্যাট্রিনের সাথে থাকবে তিনচাকার রিং ট্যাঙ্কি। বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য সমস্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকবে ৬টি গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল)। এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে সুন্দর একটি সড়ক গিয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গ্রামে। সুন্দর যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরগুলোর প্রায় ৫শ মিটারের মধ্যে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ, দামোদরতপী পয়েন্টসহ সব ধরণের নাগরিক সুবিধা। সূত্র জানায়, উপজেলার পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা ও জয়কলস ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ভূমিহীন-ঘরহীন পরিবারকে দামোদরতপীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার কথা ভাবছে পিআইও অফিস। বিশেষ করে জয়কলস ইউনিয়নের সদরপুর সেতু সংলগ্ন গাঙেরহাটির নদী ভাঙনের শিকার হওয়ার ৮টি পরিবারকে এখানে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিক খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ। এ কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। দেশের সকল মানুষের কথা তিনি চিন্তা করেন। ভূমিহীন মানুষদের কথা চিন্তা করেই তিনি এ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। আমরা আশাবাদী এবং বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও ঘরহীন থাকবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও সুদীর্ঘ হায়াৎ কামনা করি। সেই সাথে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয়ের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শান্তিগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপজেলায় ইতোমধ্যে ৪শ’ ৩টি ঘর উদ্বোধন করেছেন। এ ৫০টি আগামী নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হলে নির্বাচনের আগেই বাকী ঘরগুলোও উদ্বোধনও উদ্বোধন করা হবে। এ ঘরগুলো উদ্বোধন করে গৃহহীনদের হস্তান্তর করা শেষ হলে আমাদের উপজেলায় ক শ্রেণির ভূমি ও গৃহহীন লোক আর কেউ থাকবেন না। দ্রুত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। সামনের মাসেই কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে ৪শ’ ৩টি ঘর হস্তান্তর ও উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যৌথভাবে সারা দেশে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন হওয়া ঘরগুলোর মধ্যে পূর্ব পাগলার ঘোড়াডুম্বুরে ১শ’ ৫১টি, জয়কলসের ডুংরিয়া ও নোয়াগাঁওয়ে ৭৪টি, পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের নয়াগাঁওয়ে ৫০টি, শিমুলবাকের আমরিয়া, নূরপুর, চাঁনপুর ও মুক্তাখাইয়ে ৬৫টি এবং পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের সলফ ও গাঙপাড় মিলিয়ে ৬৩টি ঘরসহ মোট ৪শ’ ৩টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। নির্মাণাধীন এ ৫০টি ঘরের উদ্বোধন হলে উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ঘরের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪শ’ ৫৩টি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত