
১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:২২
হবিগঞ্জ-৪(মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনটি সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলা সমন্বয়ে গঠিত। চা-বাগান বেষ্টিত এ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে।
দু’উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনের নির্বাচন কমিশন ঘোষিত খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৮৫। এর মধ্যে মাধবপুরে ২ লাখ ৬৭ হাজার ২ শ ৯০ জন। এখানে পুরুষ ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬’শ ৫৩ জন। নারী ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬’শ ৩৬জন ও ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। চুনারুঘাটে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৩’শ ১৯৫জন। পুরুষ ১লাখ ২১ হাজার ৩’শ ৩৮ জন, মহিলা ১ লাখ ২১ হাজার ৮’শ ৫৭ জন। দু’উপজেলায় মোট ভোটার ৫ লাখ ১০ হাজার ৪৮৫ জন।
রাজনীতিতে তরুণ স্বচ্ছ আর ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর দিকে ভোটারদের আগ্রহ বেশী। ভোটাররাও খোঁজচ্ছেন নতুন মুখ। ১৯৭০’র নির্বাচন থেকে শুরু করে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বারবার বিজয়ী হয়েছেন। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তুফা শহীদ ছয় বার এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দু’বার জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার এ আসনে বিজয়ী হয়ে হুইপ ও কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মুহিবুল হাসান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সল এমপি নির্বাচিত হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভীরের সঙ্গে খুব সহজেই এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। ২০১৯ সালে নির্বাচনে জাতীয় এক্য ফ্রন্টের প্রার্থী খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের (বাচ্চু)কে পরাজিত করে আবারও এডভোকেট মাহবুব আলী এমপি নির্বাচিত হয় এবং দায়িত্ব পান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর।
এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে খ্যাতি থাকলেও মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের রয়েছে অনেক ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ এমপি’র ঘনিষ্ট কিছু লোক ছাড়া কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীরই মুল্যায়ন নেই তার কাছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাসউদ্দিন, আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, মাধবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী (অসীম), সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মরহুম এনামুল হক মোস্তুুাফা শহীদের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা নিজামুল হক মোস্তুফা শহীদ রানা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল হাইয়ের ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী আরিফুল হাই রাজিব, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট মো. আকবর হোসেন জিতু ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মিছির আলী।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বেনু মধাব রায় বলেন, এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করা হবে।
অপর দিকে বিএনপির থেকে একাধিকবার মনোনয়ন পাওয়া সৈয়দ মো. ফয়সল রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীরা আবারও তাকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে দেখতে চায়। এছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি বর্তমান মাধবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহজাহান, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট আমিনুল ইসলাম, সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার শিপা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে নেতা-কর্মীদের মুখে।
বিএনপি নেতা কর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনে অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে কেন্দ্র যে প্রার্থীই দেন তার হাত ধরে জয় ছিনিয়ে এনে সফলতার মুখ দেখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর সৈয়দ মো. শাহজাহান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সুফিয়া আকতার হেলেন, মাধবপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হওয়ায় এবার সংসদ নির্বাচনেও এবার বিএনপির প্রার্থীরাও আশাবাদী।
মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চৌমুহনী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ বলেন-মাধবপুর-চুনারুঘাট উপজেলায় তৃর্নমূল পর্যায়ে বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছেন সৈয়দ মো. ফয়সল। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে থেকেছেন। অপর দিকে বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের ফলে মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম কামাল জানান- বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের ফলে সাধারন মানুষ দিশেহারা।নিরেপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্টিত হলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শিল্পপতি আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুব সংহতির নেতা আহাদ ইউ চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা জাপার যুগ্ম আহবায়ক কাউসার উল গনি, উপজেলা জাপার সাধারন সম্পাদক ফকির কাউসারের নামও প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ফকির কাউসার বলেন, দলীয় মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাকে মনোনীত করে তার পক্ষেই কাজ করব।
খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের বাচ্চুর বাড়ি মাধবপুর উপজেলায়। তিনিও এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনার মন্তব্য