নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১৮:২৮

চা শিল্পের ৫ সঙ্কট, সমাধানে ১১ প্রস্তাব

রেকর্ড উৎপাদন তবু সঙ্কটে চা শিল্প

গত মৌসুমে রেকর্ড চা উৎপাদন হয়েছে দেশে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৩ সালে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও চা শিল্প সঙ্কটে রয়েছে বলে মনে করছেন চা বাগান মালিকরা।

তাদের দাবি, খোলা বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করা হলেও নিলামে চায়ের নায্য মূল্য পাচ্ছেন না বাগান মালিকরা। ফলে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের। এভাবে চলে থাকলে অনেক বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চা শিল্পের উদ্যোক্তারা। চা শিল্পের ৫ টি সংক্ট চিহ্নিত করে তা সমাধানে ১১ টি প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
 
রোববার দুপুরে সিলেট অঞ্চলের ২৫ টি চা বাগানের মালিকদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন শঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়।

চা বোর্ডের সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে ১৬৮ টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ১৩৫ টিই সিলেট বিভাগে।

টি প্ল্যান্টার্স, সিলেট ডিভিশনের ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে প্যারাগন গ্রুপ টি-স্টেটের উপদেষ্টা, কালিকাবাড়ি ও ম্যাকসন ব্রাদার্স টি-স্টেটের ডিরেক্টর মুফতি এম হাসান বলেন, চা-শিল্পের উপর কয়েক লক্ষ শ্রমিক, কর্মচারীর জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে আরো কয়েক লক্ষ লোক চা-শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বর্তমানে চা-শিল্প কঠিনতম পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত যা এই শিল্পের টিকে থাকার ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে।

উৎপাদন মূল্যের চেয়েও চা-নিলাম মূল্য কম বলে উল্লেখ করে মুফতি এম হাসান বলেন, বাগানের রোগবালাই দমনে ব্যবহৃত ওষুধ, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু নিলামমূল্য তার চেয়েও বেশি মাত্রায় কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি চা উৎপাদনে খরচ পরছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অথচ বর্তমানে নিলামমূল্য ১৭০ টাকা ১৭৫ টাকা থেকে নেমে ১০০ বা ১১০ টাকায় এসেছে। এমনকি ১০০ টাকার নিচেও নিলামে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে চা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বহন করাও সম্ভব নয়।
বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে চা শিল্পের সংকটের জন্য ৫টি কারণ চিহ্নিত করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সেগুলো হলো- দেশের বাইরে থেকে চোরাই পথে নিম্নমানের চা আসা, অপরিকল্পিত পদ্ধতিতে পঞ্চগড় এলাকায় নিম্নমানের চা-উৎপাদন এবং আইন-বিধি না মেনে সেখানেই সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে চা-বিক্রয়; মজুরি, তেল, রেশন, ওষুধ (এগ্রো ক্যামিকেল) ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া; কয়েকটি বড় প্যাকেটিয়ার দ্বারা নিলাম বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধের উচ্চ হার।

এই সঙ্কট সমাধানে  ১১ টি প্রস্তাব দেন তারা। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- কেজি প্রতি চায়ের নিম্নতম মূল্য ৩৫০-৪০০ টাকা নির্ধারণ, চোরাই পথে চা-আসা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, পঞ্চগড় এলাকায় চা উৎপাদনে মান এবং আইন ও বিধিসম্মতভাবে চা বাজারজাত করার ব্যবস্থা গ্রহণ, ছোট কোম্পানি বা বাগানকে প্যাকেজিংয়ের জন্য আর্থিক  সহায়তা প্রদান, প্যাকেজিংয়ের নিম্নতম পরিমান ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ করা, ভালো প্যাকেটজাত চা বা টি ব্যাগ রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি, চা বাগানকে বহুমূখী আয়ের উৎস সৃষ্টির জন্য চা পর্যটন স্থাপনের সুযোগ প্রদান, কৃষি ব্যাংক ঋণ পরিশোধের হার কমানো এবং শর্তবালী সহজীকরণ, বি.কে.বি. ঋণ পরিশোধের শিডিউল রি-স্ট্রাকচার করার সুযোগ প্রদান, রুগ্ন ও ছোট বাগানকে ৫ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ প্রদান এবং বাগানগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষত বাগানের জমি দখলের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।

সংবাদ সম্মেলেন চা-বাগান মালিক, ম্যাকসন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খছরুজ্জামান বলেন, এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান নাহ লে অনেক বাগান বন্ধ হয়ে যাবে এবং পাট, টেক্সটাইল শিল্পের মতো চা-শিল্পও ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাগান কর্তৃপক্ষের পক্ষে আরও বক্কব্য রাখেন রেহানা চা-বাগানের পরিচারক শফিকুল বারী, খাদিম চা-বাগানের জেনারেল ম্যানেজার নোমান হায়দার, মালনি ছড়া চা-বাগানের ম্যানেজার আজম আলী, মাথিউরা ও মুমিন ছড়া চা-বাগানের ম্যানেজার রুকন উদ্দিন খান, এম আহমদ টি অ্যান্ড ল্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ মহিউদ্দিন, এম আহমদ গ্রুপের পরিচালক সাজিদ চৌধুরী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত