জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

০৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১৫:৫০

শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ৯০ ভাগ টিনের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

গত ৩১ মার্চ রাত সোয়া ১০টায় সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৯০ ভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ব্যতীত বাকি ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় সবকটি টিনের ঘরের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের এক একটি শিলা পড়ে সবকটি টিনের ঘর ফুটো হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার ফসলি জমির। যানবাহনের গ্লাস ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেকেই। অনেক পথচারী শিলাবৃষ্টির সময় মাথা ফেটে আহত হয়েছেন। এছাড়াও অনেক শিশু মহিলাও ঘরের টিন ফুটো হয়ে শিলা মাথায় পড়ে আহত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর, শরীফগঞ্জ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়ন ছাড়া গোলাপগঞ্জ সদর, বাঘা, ফুলবাড়ি, আমুড়া, লক্ষ্মীপাশা, বাদেপাশা, ঢাকাদক্ষিণ ও বুধবারীবাজার ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সবকটি টিনের ঘর শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এসব এলাকার নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও রয়েছেন বিপাকে। অনেকে টাকার অভাবে এখনো আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিলাবৃষ্টির পর ঘন ঘন বৃষ্টিপাত তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে টিনের অতিরিক্ত দাম।

সরেজমিনে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় জ্বলেনি চুলা। রমজানের সেহরি ও ইফতার অস্থায়ী চুলা তৈরি করে কোনমতে রান্না করছেন অনেকেই।

গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ইয়াগুল গ্রামের সফিক উদ্দিন জানান, দিন আনি দিন খাই। হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে মাথাগোঁজার ঠাইটা নেই। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টির মধ্যে কোনমতে বসবাস করছি। শিলাবৃষ্টির কারণে ঘরের পুরো টিন কানা কানা হয়ে গেছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। টিনেরও অনেক দাম। এখন সংসার কিভাবে চালাবো আর টিন কিভাবে লাগাবো।

একই এলাকার আতাব উদ্দিনের স্ত্রী শিপা বেগম জানান, আমার স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনমতে বেঁচে ছিলাম। হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে মাথা বাজ পড়েছে। টিন কিভাবে কিনব। আর কিভাবে বসবাস করব এই ঘরে। মহান আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর দেখার নেই।

পৌর এলাকার নুরুপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন জানান, এলাকার প্রায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। দু একটা বাড়ির ঢালাই ছাদ ছাড়া বাকি সব ঘরের উপর টিনের। গত বৃহস্পতিবারের শিলাবৃষ্টিতে এসব টিন পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। একতো রমজান মাস। তার উপর প্রতিদিন ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা খুবই অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছি।

আমুড়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় টিনের ঘরের একই অবস্থা। পুরো টিনের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের বিছানা, আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

এই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তারেক আহমদ জানান, আমার এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের ঘর টিনের। শিলাবৃষ্টিতে তাদের টিন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই। ঘরে পানি থাকায় রান্নাও করা যাচ্ছেনা। অনেক কষ্টে মানুষ আছে।

তিনি আরও বলেন, আমার এলাকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম পরিদর্শন করে গেছেন। উনার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমার এলাকার কয়েকটি পরিবারকে কিছু সহায়তা করেছেন।

এদিকে শিলাবৃষ্টির পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শন করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম। তিনি ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত ভাবে ১০০ বান টিন বিতরণ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় নগদ অর্থ দান করছেন।

এছাড়াও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে অর্থ সহায়তা করার জন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন।

এদিকে শিলাবৃষ্টির দুই দিন পর বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার ফুলবাড়ি, পৌরসভা, ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নেন এমপি নাহিদ। এসময় তিনি ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সমাজের বিত্তবান ও প্রবাসীরা এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান তিনি।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম বলেন, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার অনেক জায়গা পরিদর্শন করেছি। এমন কোন টিনের ঘর নেই যে ফুটো হয়নি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে দেশ বিদেশের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যারা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কিছু টিন ক্ষতিগ্রস্তদের দিয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি একটি বড় বরাদ্দ পাবো।

এদিকে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার রাত থেকেই বিভিন্ন টিন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আরও রয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জল ও শাহিদুর রাহমান চৌধুরী জাবেদ। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও করে যাচ্ছেন।

শুধু গোলাপগঞ্জ নয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা বিয়ানীবাজারের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নও শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে।

এসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহযোগিতা পাঠানোর আবেদন জানান সকলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত