নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ এপ্রিল, ২০২৪ ১৩:০৬

প্রস্তুত সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো, অপেক্ষা পর্যটকদের

ছবি: সংগৃহিত

রমজান শুরুর পর থেকে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকশূন্য। এ সময়ে অলস সময় পার করেন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদে এই মন্দাভাব কাটার আশা এই খাতের উদ্যোক্তাদের।

ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে সাজানো হয়েছে হোটেল, রিসোর্ট, দোকানপাটগুলো। ঈদ ঘিরে হোটেল, রিসোর্টগুলো অগ্রিম বুকিংও হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঈদের ছুটিতে ভালো ব্যবসা হবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদে অন্তত ৮-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে সিলেটে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের সঙ্গে যোগ দেবেন স্থানীয় পর্যটকরাও। এ অবস্থায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সিলেটের নাম শুনলেই পাহাড়, টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সাদা পাথর, জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানির ঝরনা আর রাতারগুলের সোয়াম ফরেস্ট চোখে ভেসে ওঠে। এ ছাড়া রাতারগুলের নয়নাভিরাম প্রকৃতি আর নীল জলের নদ লালাখাল তো রয়েছেই। জাফলং, সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই, চা-বাগান, বিভিন্ন পাহাড়, ঝরনা স্পটে বছরজুড়ে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বর্ষা মৌসুমে স্বরূপে ফিরে আসে। মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজারেও পর্যটকের ভিড় জমে।

জৈন্তা জাফলং ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেলে ৪০ থেকে ৬০ ভাগ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোর প্রায় অর্ধেক বুকিং করে রাখা হয়েছে। হোটেল-রিসোর্ট আগাম বুকিংয়ে বিশেষ ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা ঘুরতে এসে যাতে হয়রানি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন, এ জন্য নেওয়া হয়েছে নজরদারির ব্যবস্থা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ ইতিমধ্যে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র ও জনসমাগম কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

কোম্পানীগঞ্জ সাদা পাথরে দীর্ঘদিন ধরে নৌকায় মানুষ পারাপার করা মাঝি আশিক বলেন, ‘রমজানের আগে সারা বছরই পর্যটক আসে। রমজান মাসে পর্যটকেরা খুব একটা আসেন না। আশা করি, এবার ঈদের ছুটিতে অনেক পর্যটক আসবেন। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

জাফলংয়ের ব্যবসায়ী ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, ‘রমজান আসার পর থেকে ব্যবসায় ভাটা চলছে। সারা বছর ঈদ উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। আশা করি, পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আমাদের ব্যবসা ভালো হবে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা পর্যটকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।’

জৈন্তা হিলস রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমার রিসোর্টে ৩০টি রুম রয়েছে। এর মধ্যে কাপল ১৬টি ও ডবল বা ফ্যামিলি রুম আছে ১৪টি ৷ ইতিমধ্যে ১৭টির মতো রুম অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তবে তা গত দুই ঈদের তুলনায় কম। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণের সংখ্যাটা কম দেখা যাচ্ছে। আমরা ঈদে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য স্পেশাল ছাড় দিচ্ছি।’

এ বিষয়ে জাফলং জোন টুরিস্ট পুলিশ ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ বলেন, ‘জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এসে পর্যটকেরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা তৎপর রয়েছি।’

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ‘বছরজুড়েই আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকেরা এসে থাকে। পর্যটন স্পটগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করছে। কেউ সমস্যায় পড়লে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের মতো এবারও পর্যটক সিলেটে আসবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাকি সময়ের মধ্যে সবগুলো হোটেল বুকিং হয়ে যাবে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, আগামী কয়েক দিনও সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী ও শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে। এ সময় পর্যটকদের সচেতন থাকার কথা বলেন তিনি।

আবহাওয়াবিদ সজিব আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে সিলেটে ঘুরতে আসলে সবসময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে রাখা উচিত। প্রয়োজনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগ করে আবহাওয়ার নেওয়া যাবে। যেহেতু কালবৈশাখী ও শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে সেহেতু সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের আবহাওয়া প্রায় একই রকম। যখন ভ্যাপসা গরম হবে তখন কয়েকদিন একই অবস্থা থাকবে। যখন বৃষ্টি হয় তখন কয়েকদিন বৃষ্টি থাকবে। এ তিনমাস আবহাওয়া প্রায় একই রকম।

এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, টুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।

তিনি বলেন, ঈদে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারেন সে লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও টুরিস্ট পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত