এমডি মুন্না, জগন্নাথপুর

৩১ জানুয়ারি, ২০১৬ ২১:৪১

জেলে বসে শেখা হাতের কাজে স্বাবলম্বি ২০ পরিবার

জগন্নাথপুরে কুঠির শিল্পের ব্যাপক কদর রয়েছে। এর মধ্যে হাতের তৈরী বাহারী সাজের বেতের মোড়ার কদর সবচেয়ে বেশি। এসব মোড়া জগন্নাথপুরের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্যিকভাবে বেতের মোড়ার বাজার জমজমাট থাকায় কারিগররা দিনরাত কাজ করে এসব মোড়া তৈরি করছেন।

জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের ইসমাইল চক গ্রামের ২০ টি পরিবার বেতের মোড়া বানিয়ে স্বাবলম্বি হয়েছেন। যে কারণে তাদের পরিবারের আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই এখন মোড়া তৈরীর কারিগর। বাজারে এসব হাতের তৈরী বসার মোড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তারা দিন রাত মোড়া বানাতে ব্যস্ত থাকেন।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মোড়া শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। অতীতের মতো এসব মোড়া স্থানীয় হাট-বাজারে খুব একটা দেখা যায় না। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় কুঠির শিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন ইসমাইল চক গ্রামের লোকজন। তাদের হাতের তৈরী মোড়া এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে।

মোড়া বিক্রি করে ইতোমধ্যে গ্রামের ২০ টি পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন।


সরজমিনে ইসমাইল চক গ্রামের মোড়া কারিগর শিশু মিয়া, ময়না মিয়া, এলাইছ মিয়া, নুর হোসেন, রহিম উদ্দিন, রিপন মিয়া, লেবু মিয়া, আবরুছ মিয়া, আব্দুল আলী, তৌরুছ আলী, রাব উদ্দিন, আবুল কালাম, লাল হোসেন, আবুল হোসেন, মছব্বির, জমির আলী, অজুদ মিয়া, নজিবুল হোসেন, নানু মিয়াসহ অনেকে জানান, তাদের পরিবারের ছোট-বড় সকলে মোড়া তৈরীর কাজ জানেন। প্রতিদিন তারা বেত, বাঁশ ও প্লাস্টিকের ফিতা দিয়ে বাহারি রঙের মোড়া তৈরী করে থাকেন। এসব মোড়া জগন্নাথপুর ও সিলেটে নিয়ে বিক্রি করা হয়। মোড়া বিক্রির টাকায় স্বাচ্ছন্দে চলছে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া। তবে মাঝে-মধ্যে তারা অভাব-অনটনে পড়ে যান। অনেক সময় বাড়িতে তৈরী করা মোড়া বাজারে সঠিক সময়ে বিক্রি না হলে তারা বিপাকে পড়ে যান।

আবার অনেক সময় টাকার অভাবে মোড়া তৈরীর সরঞ্জাম কিনতে পারেন না তারা। এ সময় পুঁজির অভাবে তাদের ব্যবসা মন্দা হয়ে যায়। তাই গ্রাম-বাংলার ঐতিবাহী মোড়া শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।

তারা আরো বলেন, বিগত প্রায় ২৫ বছর আগে ইসমাইল চক গ্রামের ইর্শ্বাদ উল্লাহ ও জমসেদ মিয়া নামের দুই ব্যক্তি একটি মামলায় দীর্ঘ ৭ বছর কারাভোগ করেন। এ সময় তারা জেল হাজতে এসব মোড়া তৈরীর কাজ শিখেছিলেন। পরে তারা মুক্তি পেয়ে বাড়িতে গিয়ে নিজেরা মোড়া তৈরীর কাজ শুরু করেন। মোড়া তৈরী করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ছিলেন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে গ্রামের অন্যান্য লোকজন মোড়া তৈরীর কাজ শিখে তারাও স্বাবলম্বী হন। এক পর্যায়ে ইর্শ্বাদ উল্লাহ ও জমসেদ মিয়ার মৃত্যু হলেও তাদের শিখিয়ে যাওয়া মোড়া শিল্প আজও বেঁচে আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত