নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৮:১৫

পরিষদে বসেন না প্যানেল চেয়ারম্যান, মামলার আসামি হওয়ায় স্বাক্ষর দেন অজ্ঞাত স্থান থেকে

বড়লেখা সদর ইউপি: বার বার ঘুরে দিশেহারা সেবাপ্রত্যাশীরা

বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। এরমধ্যে গত ২৯ আগস্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ নেতা ছালেহ আহমদ জুয়েল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন।

তার অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালন করার কথা। তবে এই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন আউয়াল-ও মামলার আসামি হওয়ায় দুজনই আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় বেড়েছে চরম ভোগান্তি।

তবে অজ্ঞাত স্থান থেকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন আউয়াল। এই স্বাক্ষর এবং জরুরি কাগজপত্র পেতে সেবাপ্রত্যাশীরা বার বার ঘুরে দিশেহারা। এ ছাড়া, জটিলতা দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক কাজেও। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্যানেল চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন আউয়াল অফিস না করে আত্মগোপনে থেকে জরুরি কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর প্রদান কতটুকু বিধিসম্মত।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র পরিষদে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের দায়িত্বে আছেন বড়লেখা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম।

সরেজমিনে বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি কাগজপত্রের জন্য সেবাপ্রত্যাশীরা ভিড় করেছেন পরিষদ প্রাঙ্গণে। কিন্তু ইউনিয়নে থাকা ইউপি সদস্য ও কর্মচারীরা তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পারছেন না। দিনের পর দিন ঘুরেও সময়মতো কাগজপত্র না পেয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে।

ইউনিয়নে আসা ২ নম্বর ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, গত এক সাপ্তাহ ধরে তারা ঘুরছেন। তাদের কেউ নাগরিক সনদ, কেউ ট্রেড লাইসেন্স, কেউ প্রত্যয়নপত্রসহ জরুরি কাগজের জন্য ইউনিয়নে এসেছেন। তবে সময়মতো কাগজপত্র না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউপি সদস্য বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যানরা মামলার আসামি। তারা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আবার দায়িত্বও ছাড়ছেন না। এ অবস্থায় বিপাকে পড়ে সেবা নিতে আসা লোকজনের কাগজপত্র গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্যরা নিয়ে যান অজ্ঞাত স্থানে থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান আফজাল হোসেনের কাছে। সেখানে তিনি স্বাক্ষর করে দিলে কাগজপত্র নাগরিকদের হাতে পৌঁছানো হয়। এক্ষেতেও দুই-তিন সময় চলে যায়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন আউয়ালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, গত রবিবার ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত