সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ১৬:১২

‘ময়নুল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ’

কোম্পানীগঞ্জে ময়নুল হক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহতের ছেলে  উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের শিলাকুড়ি গ্রামের মোঃ. সুরুজ আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এলাকার প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জানুয়ারি আমার পিতা ময়নুল হক মৃত্যুবরণ করেন। আমার পিতা ছিলেন একজন মৎস্যজীবী ও দরিদ্র কৃষক। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। আসামিদের একের পর এক হুমকিতে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে দিন পার করছি।

তিনি বলেন, কোম্পানীগঞ্জের ইছাকলস ইউনিয়নের শিলাকুড়ি বিলের জলমহাল ১৪২২ থেকে ১৪২৭ বাংলা সন পর্যন্ত সরকার ইজারা প্রদান করেন। উপজেলার বিলাজুর হিন্দু কল্যাণ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ওই ইজারা গ্রহণ করেন। সমিতির সভাপতি মানিক বিশ্বাস জলমহালটি দেখাশুনা করার জন্য আমার পিতাকে নিয়োগ করেন। আমরা ঠিকমতোই জলমহাল দেখাশুনা করে আসছিলাম। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কুনজর পড়ে জলমহালের উপর। শিলাকুড়ি বিলের পার্শ্ববর্তী শিলাকুড়ি গ্রামের হাবিব, মখলিছ ও নিয়ামত আলীর নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতিকারী জলমহালে অবৈধ জাল দিয়ে জোরপূর্বক মাছ নিধন শুরু করে। এতে কেয়ারটেকার হিসেবে আমার পিতাসহ আমরা বাধা প্রদান করি। এ কারণেই হাবিব গংরা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরই জের ধরে গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ৯টার দিকে হাবিব, মখলিছ, নিয়ামত আলী, এখলাছ, মহিবুর, সেলিম, আরিফ, রহিম, মুজিব, মুকিতসহ ২৫/৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আমাদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে আমাদের উপর হামলা চালালে আমার পিতা ময়নুল হক, আমার ভাই সুলতান ও আমি গুরুতর আহত হই। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার পিতা ময়নুল হক গত ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যান।

সুরুজ আলী আরো বলেন, হামলার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলা নং ৯। শিলাকুড়ি গ্রামের নিয়ামত আলীর পুত্র হাবিব, মখলিছ ও এখলাছ, মৃত ইনছান আলীর পুত্র নিয়ামত আলী, আইনুদ্দিনের পুত্র সেলিম, খলিল মিয়ার পুত্র আরিফ, ইসলাম উদ্দিনের পুত্র রহিম উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে মামলায় আসামি করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে আহত অবস্থায় মাত্র তিনদিনের মাথায় আমার পিতা মারা যাওয়ায় নতুন করে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে ৩০২/৩৪ ধারা সংযোজন করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করেছে।

আমার পিতা মারা যাওয়ার পরদিন আমরাসহ গ্রামবাসী মিলে মামলার ২নং আসামি মখলিছকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করি। এত বড় একটি ঘটনা ঘটলেও কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশে কোনো তৎপরতা আমাদের চোখে পড়েনি। তথ্য দেয়ার পরও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না। আসামিরা বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছে বোয়ালকে শেষ করেছি এবার টেংরা পুটিকে শেষ করবো।

এদের হুমকিতে আমরা চরম নিরাপত্তহীনতায় রয়েছি। তাদের অব্যাহত হুমকির কারণে মামলায় আরও কিছু নতুন আসামিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কোম্পানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এতো কিছুর পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। থানার ওসি বায়েছ আলম রহস্যজনক আচরণ করছেন। যোগাযোগ করলে আমাদেরকে পাত্তা দেননা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ. আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের নিকট বার বার টাকা দাবি করেন। আমরা গরীব অসহায় মানুষ। আমার পিতাও ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। দিন আনি দিন খাই। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মামলার কার্যক্রম চালানো কিংবা আসামিদের গ্রেফতার করানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকায় প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ায় পুলিশ তাদের পক্ষ অবলম্বন করছে। আসামিরা পুলিশকে ম্যানেজ করে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সুরুজ আলী আসামীদের গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত