সাজু মারছিয়াং, শ্রীমঙ্গল

১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ২২:২৮

শ্রীমঙ্গলে শেষ হলো বর্ণিল ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’

শ্রীমঙ্গলে বর্ণিল আয়োজনে শেষ হলো ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের বর্ণিল জীবন ও মেলবন্ধনের ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’-২০২৫। আগামী বছর আবারও শ্রীমঙ্গলে এ আয়োজন করার ঘোষণা দিয়ে সমাপ্ত হলো উৎসব।

পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এ আয়োজন করা হয়।

তিন দিনব্যাপী মনোমুগ্ধকর এই উৎসবটি দারুণভাবে উপভোগ করেছেন আগত দর্শনার্থীরা।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের ২৬ টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ছিল একই মঞ্চে। ছিল পর্যটক ও স্থানীয়দের উপচেপড়া ভিড়। কানায় কানায় পুর্নছিল মেলা প্রাঙ্গন, এ যেন এক সম্প্রীতির মিলন মেলা। উৎসবের শেষ‌দিন চা-জনগোষ্ঠীর মুন্ডা সম্প্রদায় মুন্ডারী নৃত্য, এরপর দুপুরে বুনার্জীদের উড়িয়া ভজন, গড়াইত নৃত্য, রাজবল্ববদের উড়িয়া নৃত্য, শবরদের পত্র সওরা নৃত্য, ঝুমুর নৃত্য, কুই নৃত্য, লাগরে নৃত্য, ওড়াও নৃত্য, জুম নৃত্য, খাড়িয়া নৃত্য, গারোদের সেরেনজিং নৃত্য, বৈশ্য নৃত্য, খাসি দলীয় নৃত্য, ধামাইল নৃত্য, গারোদের মান্দি নৃত্য, এবং সবশেষে মনিপুরীদের রাধাকৃষ্ণ নৃত্য, দিয়ে উৎসব শেষ হয়।

রোববার (১২ জানুয়ারী) রাত ৮টায় উৎসব প্রাঙ্গণে “হারমোনি ফেস্টিভ্যাল এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিপনন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ) পরিচালক ও যুগ্ন-সচিব  সালেহা বিনতে সিরাজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, উপ-পরিচালক বিপনন ও ব্রান্ডিং মহিবুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ  মো. আমিনুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুল হাসান চৌধুরী।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাশ, যুব-উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক ফিলা পতমী, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা, মৌলভীবাজার চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, স্মার্ট ট্যুরিজম এর সত্ত্বাধিকারি সাংবাদিক এম এ রাকিব, বৈশাখী ট্যুরিজম এর সিইও মো. শফিকুল ইসলাম রুম্মন সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।

বিশেষ অতিথি শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, এই প্রথম অত্র উপজেলায় বিশাল আয়োজনের এ মেলবন্ধন যেন প্রতি বছর আমরা এই শ্রীমঙ্গলে উদযাপন করতে পারি। আমরা এবছর যেভাবে মানুষের সমাগম ও আগ্রহ দেখেছি আশা করছি ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে করতে পারব। এমন মিলনমেলা বিরল! এ‌ থেকে আমাদের নতুন প‌রিকল্পনা করতে পারলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কাজে আসবে, উৎস‌বের ধারাবাহিকতা সার্থক হবে।

প্রধান অতিথি সালেহা বিনতে সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা ভাবতেই পারি নাই তিন‌দিনের “হারমোনি ফেস্টিভ্যালে এত দর্শনার্থী হবে। দেশ বিদেশ থেকে আসা উৎসব মুখর হাজারো পর্যটকরা আমাদের এ মেলা প্রাঙ্গণে এসেছেন। দর্শনার্থীদের দেখে খুব ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে আমাদের কষ্ঠ যেন স্বার্থক হয়েছে। আমরা প্রতি বছর একই স্থানে এ উৎসব বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজন করব। বাংলাদেশের আর কোথাও এত নৃগোষ্ঠীর বসবাস নেই, আছে শুধু শ্রীমঙ্গলে।
উল্লেখ্য গত ১০জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের কাকিয়াছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই উৎসব উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান, প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের, জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন। প্রতি‌দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এ উৎসব। এখানে ছিলো স্থানীয় বিভিন্ন নৃ-গাষ্ঠীর সাংস্কৃ‌তিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন উপকরণের মেলাও।
পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড-এর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে তিনদিনের ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে উৎসবে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষ থেকে  সম্মাননা স্বারক প্রদান করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত