
১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ ২০:০৪
সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোর ইজারা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের বাধা কেটে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা। আর পরিবেশকর্মীরা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
যদিও, সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন এখানের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনও করছেন তারা। তবে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি পরিবেশ কর্মীদের।
মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে পাথর ব্যবসায়ীদেরই জয় হলো। ফলে দীর্ঘ আট বছর পর খুলতে যাচ্ছে কোয়ারিগুলো।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরিনা আফরিন মোস্তফা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রসমূহের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সারা দেশে গেজেটভুক্ত কোয়ারিসমূহের ইজারা কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে এ বিভাগের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখের ২৮.০০.০০০০.০২৮.৩১. ০০৪.১৮.১২ (অংশ-১)-১৯ নম্বর স্মারকে, “সারা দেশের গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি, সিলিকাবালু কোয়ারি, নূরীপাথর, সাদা মাটি উত্তোলনসহ অন্যান্য সকল কোয়ারির ইজারা আপাতত: বন্ধ থাকবে” মর্মে গৃহীত সিদ্ধান্তটি, এতদ্বারা নির্দেশক্রমে বাতিল করা হলো।’
এতে করে সিলেটসহ সারাদেশ বন্ধ থাকা সকল পাথর ও বালু মহাল থেকে পাথর, বালু, সাদামাটি উত্তোলনে আর বাধা থাকলো না।
জানা যায়, পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা জারি করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৮ সালে পাথর কোয়ারিগুলোর ইজারা প্রদান বন্ধ রাখে মন্ত্রণালয়।
তারও আগে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘণীভূত হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’
তবে পাথর ব্যবসায়ীরা বারবারেই দাবি জানাচ্ছিলেন, কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ থাকা ও পাথর উত্তোলন না করায় নদীর প্রবেশমুখে স্তুপাকারে আটকে আছে পাথর। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাথর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এতে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া কোয়ারি বন্ধ থাকায় বেকার হয়েছেন কয়েক লাখ শ্রমিক।
মন্ত্রনালয়ের এমন সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সিলেটের পাথর ব্যবসায়ীরা। সিলেটের পাথর বেষ্টিত এলাকা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটে সোমবার রাতে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবসায়ীও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। থেকে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন অচলাবস্থা থাকায় কোয়ারি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। ব্যবসায়ীরা হয়ে গেছেন দেউলিয়া। শ্রমিকরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। এখন এই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে কোয়ারিগুলো আবার কর্মমুখর হবে।
তাদের দাবি, স্থানীয় অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি হচ্ছে পাথর কোয়ারি। কোয়ারিগুলো থেকে পরিবেশ সম্মতভাবে পাথর উত্তোলন অর্থনীতির জন্য জরুরী।
তবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ পরিব্শে আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার।
তিনি বলেন, পাথর কোয়ারিগুলোর ব্যাপারে মন্ত্রনালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আত্মঘাতি। কোয়ারি চালু হলে পরিবেশ, প্রকৃতি, জনস্বার্থ, সর্বপোরি জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আগামীতে আমাদের সবাইকে এর বড় মাসুর দিতে হবে।
তিনি বলেন, বেলা নিজের অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে লড়াই অব্যাহত রাখবে।
আপনার মন্তব্য