০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২১:১৬
হবিগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও আলোচনা হয়ে উঠেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। বিএনপিতে যোগদান করার পর থেকেই তাকে নিয়ে এলাকায় আলোচনা চলছে ।
সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর বুধবার নিজ এলাকা নবীগঞ্জে আসেন রেজা কিবরিয়া। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ–বাহুবল) আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এর আগেও একাধিকবার ড. রেজা কিবরিয়া প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তিনি হবিগঞ্জ-১ আসন থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। বিএনপিও এখন পর্যন্ত আসনটি ফাঁকা রেখে দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে তিনি এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে ভোটের মাঠে নামার আগে নিজ দলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে রেজা কিবরিয়াকে। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাতসহ বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
বারবার দলবদলে সমালোচনা
রাজনীতিতে রেজা কিবরিয়ার পরিচিতি ‘ক্লিন ইমেজ’ নেতা হিসেবে। তবে বারবার দলবদল নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে প্রবল।
২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগ দিয়ে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং একই বছরের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভোটও পান। যদিও ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েকঘন্টার মধ্যেই বর্জন করে বিএনপিসহ জোটের দলগুলো।
পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও মতপার্থক্যের কারণে গণফোরাম ছাড়েন রেজা। ২০২১ সালে নুরুল হক নুরকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন গণঅধিকার পরিষদ। সেখানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে দলটি ভাঙনের মুখে পড়লে সেখান থেকেও বেরিয়ে যান। যোগ দেন আমজনতার দলে। সর্বশেষ এবার বিএনপিতে যোগদান করলেন।
জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন!
হবিগঞ্জে রেজা কিবরিয়াকে ঘিরে জনমনে আশা ও প্রশ্ন—দুটিই সমানভাবে রয়েছে। রেজা কিবরিয়ার যোগদানকে স্বাগত জানালেও হবিগঞ্জ-১ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে আপত্তিও রয়েছে। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আর এলাকায় পা রাখেননি তিনি।
নবীগঞ্জ শহরের গাজীরটেক এলাকায় কথা হয় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে নিয়ে আমরা নবীগঞ্জবাসী গর্ব করি। বিএনপিতে যোগদান করায় আশা করছি আগামী সরকারে আমাদের এলাকার সন্তানকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পাব। এর মাধ্যমে সরকার ও দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’
তবে রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে কিছু আপত্তিও তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষ্যে, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি আর এলাকায় আসেননি। এটাকে জনগণ খুব ইতিবাচকভাবে নেবে বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে ১৮’র নির্বাচনে তিনি যে সাড়া পেয়েছিলেন, এবার তা নাও মিলতে পারে। কারণ ভোটাররা এমন একজন প্রতিনিধিকেই সংসদে পাঠাতে চান, যিনি এলাকার মানুষের সুখ–দুঃখে পাশে থাকবেন।’
নবীগঞ্জ শহরের আরেক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া একজন যোগ্য অর্থনীতিবিদ, দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। তবে আমাদের এলাকার মানুষের সাথে তার সংযুক্তি নেই। ১৮ সালের নির্বাচনের পর এলাকার মানুষের খোঁজও নেন না তিনি। শুধু ভোটের সময় এলাকায় আসবেন, মানুষ তাকে ভোট দিবে- এটা হতে পারে না।’
স্থানীয় বিএনপিতে ‘নীরব দ্বিমত’
রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বিমত না থাকলেও ভেতরে ভেতরে অনেক নেতাকর্মীর আপত্তি রয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘ড. রেজা কিবরিয়া আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তবে হবিগঞ্জ-১ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে অবশ্যই আমাদের দ্বিমত আছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দলের জন্য লড়াই করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। এখন যদি তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়, সেটা নিঃসন্দেহে অন্যায় হবে।’
তিনি বলেন, ‘রেজা কিবরিয়াকে হবিগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন না দিয়েও যথেষ্ট সম্মান দেওয়া সম্ভব। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ। বিএনপি সরকার গঠন করলে তাকে টেকনোক্র্যাট কোটায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’
অন্যদিকে, নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর মিয়া ভিন্ন সুরে বলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ। কেন্দ্র তাকে মনোনয়ন দিলে দেশের স্বার্থেই দেবে। আমাদের আপত্তির কোনো কারণ নেই। রেজা কিবরিয়ার কাছ থেকে দেশ অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। বিএনপি যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করব এবং হবিগঞ্জ-১ আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দেব।’
এ বিষয়ে জানতে ড. রেজা কিবরিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
আপনার মন্তব্য