তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৮ মার্চ, ২০১৬ ১৪:২৯

তাহিরপুরে হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওরগুলোতে ফসল রক্ষা বেড়ি বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এই উপজেলার সব কয়েকটি হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৪০ভাগ কাজই শেষ হয়নি। ফলে তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় মোট ২৩টি হাওরের উৎপাদিত ২শ কোটি টাকার ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক।

উপজেলার উল্লেখ যোগ্য বৃহৎ হাওরগুলো হলো-শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,বলদার হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওরসহ মোট ছোট-বড় ২৩টি। এসব হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় আবাদী জমির পরিমান মোট ২৪হাজার ৯শত ৯৫হেক্টর। তার মধ্যে ১৮হাজার ২শত হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন প্রকার ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। উৎপাদিত ধানের মধ্যে রয়েছে-হাইবিট ৮শ হেক্টর,স্থানীয় ২২শ হেক্টর ও বাকি জমিতে অকশি জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে।

এসব জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত ধান থেকে ৬৪ হাজার মেঃটন চাল হয়। যার মূল্য ২শত কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি বছরই হাওরগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্য দিয়ে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণ করার ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৪হাজার ৯হেক্টর জমির ধান। উপজেলার কৃষকরা তাদের কষ্ঠার্যিত ফসল হারিয়ে হয়ে যায় নিঃস্ব।

হাওরের কৃষকরা জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কারণ প্রতিটি ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হাওরে নির্মিত বেরী বাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোন উপকারে না আসলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারী হচ্ছে। পাউবোর ঠিকাদার ও পিআইসিরা বাঁধের উপর থাকা গাছ-পালা কেটে পরিস্কার না করেই,বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোন রকম দায় সারা ভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর মাটি দিয়ে বেরী বাঁধ নির্মান করছেন।

আবার অনেকেই এখনও পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু না করে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে বুক ফুলিয়ে এলাকায় চলা ফেরা করছেন। আর যে সকল বাঁধের কাজ চলছে সেগুলো ব্যাপার অনিয়ম আর দূর্নীতির মধ্য দিয়ে কচ্ছব গতিতে চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে তাহিরপর উপজেলার ২৩টি হাওরের মধ্যে ১৬টি হাওরের বাঁধ নিমার্ন ও মাটি ভড়াটের কাজ পায়। নিদির্ষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে বেরী বাঁধ তৈরি করার পর,বস্তায় মাটি ভড়ে,বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ মানছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার ও পিআইসি জানান, বেড়ি বাঁধ নিমাণের বরাদ্ধ আনতে গিয়ে পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কাজে ১৫ভাগ ঘুষ দিতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় অর্থ সময়তো বরাদ্ধ না পাওয়ার কারণে বাঁধের কাজ সঠিক ভাবে শেষ করতে সময় লাগছে।

উপজেলার শনি ও মাতিয়ান হাওরের কৃষক সালাম মিয়া,কাদির মিয়া,আলী আহমদ,জামাল উদ্দিনসহ আরো অনেকেই বলেন,নিজেদের আখের গোছানোর জন্যেই সময় মত বাঁধ নির্মাণ না করে অনিয়ম করছে। তাছাড়া দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ ভাগ কাজ হয় না। ফলে সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধগুলো ভেঙ্গে হাওরগুলো ডুবে যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন,হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে আমাদের কোন পরামর্শ না নিয়েই মনগড়া ভাবে কাজ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন-বাঁধ নির্মাণে দেড়ি হচ্ছে দেখে হাওরবাসী আতংকের মধ্যে রয়েছে,আমি বাঁধ নির্মানের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি,সঠিক ভাবে নির্মাণ না করার কারণে হাওরের প্রতিটি বাঁধ খুবই ঝুকিপূর্ণ। বাঁধ নির্মানের দায়িত্বে থাকা লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোদ্ধে ১৫ভাগ কমিশনের অভিযোগ করেছেন। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, কমিশনের বিষয়টি আমার জানা নেই,তবে হাওর থেকে দেড়িতে পানি নামা ও বাঁধ নির্মান কমিটি গঠনে পদ নিয়ে জঠিলতায় সময় লেগেছে। এজন্য বেরী বাঁধ নির্মাণের সাথে জড়িত পিআইসিরা তাদের নির্ধারিত কাজ শেষ না করায়,নতুন করে বরাদ্ধ দিতে দেড়ি হয়েছে।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত