শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

১৬ মার্চ, ২০১৬ ২০:১৪

হবিগঞ্জে আইনগত সহায়তা কেন্দ্রে ৩ বছরে ৮৪০ মামলা, সেমিনারে তথ্য

হবিগঞ্জে আইনগত সহায়তা কেন্দ্রে ৩ বছরে ৮৪০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মাঝে মীমাংসা করা হয়েছে ৩৩৪টি। আর এখনও বিচারাধীন আছে ৫০৬টি মামলা। ফৌজদারি অপরাধে দায়ের করা ২০১৩ সালে ১৬৬টি মামলা দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় ৯৩টি। ২০১৪ সালে ২১২টি দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় ৬৩টি এবং ২০১৫ সালে ২২২টি মামলা দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় ৮৮টি। ২০১৩ সালে ৩৮টি দেওয়ানী মামলা দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় ২২টি। ২০১৪ সালে ৪৪টি মামলা দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় মাত্র ৬টি। ২০১৫ সালে ৪৮টি মামলা দায়ের হয়, কিন্তু নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৩টি। পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে দায়ের হয় ২২টি, আর নিষ্পত্তি হয় ৩০টি। ২০১৪ সালে ৩২টি দায়ের হয়, নিষ্পত্তি হয় ১৫টি। ২০১৫ সালে ৫৬টি মামলা দায়ের হয়, আর নিষ্পত্তি হয় ১৪টি মামলা।

জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি হবিগঞ্জ আয়োজিত “সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রয়োগ, সাফল্য ও সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির চেয়ারম্যান হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক সিনিয়র জেলা জজ মালিক আব্দুল্লাহ আল-আমিন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সভাকক্ষে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রয়োগ, সাফল্য ও সম্ভাবনা শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত সুলতানার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে উল্লেখিত তথ্য উপস্থাপন করেন সহকারী জজ ও লিগ্যাল এইড অফিসার এ.এস.এম এমরান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জেলা জজ কিরণ শংকর হালদার ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোলায়মান।

অন্যান্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, সিভিল সার্জন ডা. দেবপদ রায়, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হুমায়ূন কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. ছালেহ উদ্দিন আহমেদ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মাসুম মোল্লা প্রমুখ।

প্রধান অতিথি বলেন, লিগ্যাল এইড আইন হয় ২০০০ সালে। এর কার্যক্রম মূলত শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। শুরু থেকে এখানে ৫২৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শুধু ২০১৫ সালেই নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৫টি মামলা। ওই বছর মামলা দায়ের হয় ৩২৬টি। শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৮ লাখ ১ হাজার ৪শ’ টাকা দিয়েছে। এ টাকা কোন সংস্থার নয়। পুরো টাকাই বাংলাদেশ সরকারের।

তিনি বলেন, আপোষ নিষ্পত্তি না হলে মামলার জট আরও বৃদ্ধি পেতো। এখন ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে। আর সেটি হলে বাড়িতে বসেই মানুষ মামলার তারিখ জানতে পারবে। ন্যাশনাল হেল্প লাইনও চালু হচ্ছে। এখানে এক সাথে ৬ জন ফোন করে আইনি সহায়তা নিতে পারবেন। এ জন্য কোন টাকা খরচ হবেনা।

পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, মামলা করলে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির মানুষই মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পরেন। উদাহরণ সরূপ তিনি বলেন হবিগঞ্জ জেলে গিয়ে দেখেন সেখানে কোনো ধনী আসামী নেই। উন্নত দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি চালু হয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি চালু করা খুব বেশি প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুলল্লাহ বলেন, পৃথিবীর শুরু থেকেই সালিশ ছিল, থাকবে। তবে পূর্বে তা আইনের মধ্যে ছিল না, কিন্তু এখন  বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন হয়েছে। যদি সালিশে বিরোধ নিষ্পত্তি না হতো, তবে দিন দিন মামলার জট বাড়তেই থাকতো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত