এস আলম সুমন, কুলাউড়া:

১৯ মার্চ, ২০১৬ ১১:১৭

মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত স্বামী দেখিয়ে ভাতিজা স্ত্রী কর্তৃক ভাতা আত্মসাৎ!

ভিক্ষা করে জীবন-যাপন করছেন মুক্তিযোদ্ধা সীতারাম ভর

দেশ মাতৃকার টানে ১৯৭১ সালে যুদ্ধে গিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুরের চাতলাপুর বাগানের পালকিছড়ার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সীতারাম ভর ওরফে গঙ্গারাম ভর। গৃহহীন সেই বীরযোদ্ধা এখন পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কখনো ভিক্ষা করে খাচ্ছেন, আবার কখনো না খেয়ে থাকেন। বর্তমানে এলাকার একটি চায়ের দোকানেই তাঁর বাস। কিন্তু তাঁরই ভাতিজা স্ত্রী রাম পিয়ারী ভর সীতারাম ভরকে তার মৃত স্বামী দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ করছেন। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চাতলাপুর চা বাগানের পালকিছড়া ভর টিলায় জন্ম গ্রহণ করেন সীতারাম ভর। যুবক বয়সে সীতারাম দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে তিনি হয়ে যান কিছুটা মানসিক বিকারগ্রস্ত। নিজস্ব কোন বাসস্থান না থাকায় বর্তমানে তিনি থাকেন চাতলাপুর চা বাগানের মন্দিরের পাশে একটি পরিত্যক্ত চায়ের দোকানে।

সীতারামের মামাত ভাই পঞ্চম ভর, ওই এলাকার শ্রীবানন ভর ও নারায়ণ গোয়ালাসহ অনেকেই জানান, সীতারামের আপন ভাতিজা বাবুয়া ভরের স্ত্রী রাম পিয়ারী ভর তাকে (সীতারামকে) মৃত স্বামী দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন চিনু ও ইউপি সদস্য রাধা কুর্মির সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ করে আসছেন। অথচ সীতারাম পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন। স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেও এদেশে বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে আছেন। যারা জীবিত লোককে মৃত দেখিয়ে ভাতা আত্মসাৎ করছেন তাদের সকলকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। পঞ্চম ভর আরও বলেন, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও তারা সীতারাম ভরকে কোনও সার্টিফিকেট দিতে রাজী হননি। কুলাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাছে গেলে তিনি বলেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটি ভাগ-ভাটোয়ারা করে খেতে।

তাঁর বোন বাসন্তী ভর বলেন তাঁর ভাই বিয়ে করেন জেরিন চা বাগানের সাবিত্রী রানী ভরকে। শ্রীভর (১৭) ও সোনিয়া ভর (১৪) নামে তাঁর দু’টি সন্তান রয়েছে। সাবিত্রী ও তার সন্তানেরা জেরিন চা বাগানে থাকেন। তিনি তাঁর ভাইয়ের প্রকৃত স্বীকৃতি ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা দাবি করেন।

মুক্তিযোদ্ধা সীতারাম ভর বলেন, “যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেও ঘর-বাড়ি ছাড়া এখন রাস্তায় রাস্তায় খেয়ে না খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। স্বাধীন দেশে প্রতারণার স্বীকার হয়ে সরকারী ভাতা থেকেও বঞ্চিত।”

অভিযুক্ত রাম পিয়ারী ভর সীতারাম ভর’কে তার শ্বশুর স্বীকার করে বলেন, সে কোথায় আছে বেঁচে আছে না মরে গেছে তা তিনি জানেন না। কিভাবে ভাতা খাচ্ছেন প্রশ্ন করলে এর কোন সুদুত্তর না দিয়ে ঘরের ভিতর চলে যান এবং বলেন এগুলো রাধা মেম্বার জানেন।

শরীফপুর ইউনিয়নের মেম্বার রাধা কুর্মির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমার সাথে আলাপ করেছেন। রাম পিয়ারীর কাছ থেকে ভাতার বইটি উদ্ধার করে সীতারামের নামে বইটি ঠিক করে দেব। জীবিত সীতারামকে মৃত স্বামী দেখিয়ে কিভাবে সার্টিফিকেট দিলেন এমন প্রশ্নর কোন সুদুত্তর না দিয়ে বলেন, সীতারাম ৭-৮ বছর উধাও ছিলেন এই সুযোগে অন্য কেউ এ কাজটি করেছে।



শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন এ সম্পর্কে আমি পুরোপুরি জানিনা। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।


উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুশীল দেব তার উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি এ ব্যাপারে শুনেছেন এবং মেম্বারকে বইটি জব্দ করার জন্য জানিয়েছেন।

কুলাউড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কল্লোল শাহ সিলেটটুডে’কে বলেন, “ব্যাপারটি অনেক আগের তাই আমার জানা ছিলোনা। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সমাজকল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে বইটি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছি। শীঘ্রই বিষয়টি তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ইউএনও স্যারের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত