নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মার্চ, ২০১৬ ০০:৩৭

মাকে দেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন কারামুক্ত আরিফ

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর কারাবন্দি হয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের বহিস্কৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রায় এক বছর তিন মাস পর সোমবার জামিনে মুক্তি পান আরিফ। তাও মাত্র ১৫ দিনের জন্যে।

মায়ের অসুস্থতার কারণে অন্তবর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয় আরিফকে। তাই মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার সিলেট এসেই হাসপাতালে ছুটে যান মাকে দেখতে। মৃত্যুশয্যায় বৃদ্ধা মা। দীর্ঘদিন পর দেখা। ফলে আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না আরিফ। হু হু করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তিনি। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন শিশুর মতো।  অসুস্থ মাও কেঁদে কেঁদে ছেলেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্ট করেন। এরপর কিছুক্ষণ মায়ের শয্যাপাশে সময় পার করনে তিনি।

আরিফ নিজেও অসুস্থ। পরে মায়ের সাথে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকেও।

২০১৩ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুই বারের সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক চার্জশীটে নাম উঠে আসলে আদালতে আত্মসমর্পন করেন তিনি। পরে মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিস্কার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়।

পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে,  সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আরিফ। পরে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরমর্শ নেন আরিফ। ডাক্তার তাকে দু’দিনের জন্য ছুটি দেয়। আর এ সুযোগেই তিনি মঙ্গলবার বেলা সোয় ১১টায় সিলেট আসেন।


এদিকে সিলেট পৌঁছার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মেয়র আরিফ নগরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তার মা ও নিজের সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। এছাড়াও নগরবসীর দোয়ার মাধ্যমে তিনি সকল ধরনের অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের তৎকালীন মেয়র জি কে গউছ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১১ জনের নাম যোগ করে কিবরিয়া হত্যা মামলার সংশোধিত সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। পরদিন আরিফসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেন আরিফ। তারপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন।


নিজের অসুস্থতা এবং মায়ের অসুস্থতার প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ হাইকোর্ট থেকে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৫ দিনের জামিন পেয়েছিলেন আরিফ। তবে বিস্ফোরক মামলা থাকার কারণে তিনি মুক্তি পাননি। পরে গত রোববার বেলা ১১টায় আরিফের নিজের অসুস্থতা এবং মায়ের অসুস্থতার প্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বিস্ফোরক মামলায় জামিন লাভ করেন। হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আতাবুল্লাহ তার ১৫ দিনের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিল লাভের পরদিন সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

এদিকে প্রিয় সন্তান আরিফের জামিন হয়েছে শুনে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছটফট করছিলেন আমেনা খাতুন। কবে আরিফ আসবেন আর তাকে বুকে টেনে নেবেন, এমন ভাবনায় সময় কাটছিল আমেনা খাতুনের। অবশেষে মঙ্গলবার বেলা সোয় ১১টায় সিলেট পৌঁছার পরপরই নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাকে দেখতে সেখানে যান আরিফ। মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে বুকে জড়িয়ে ধরেন আরিফ। মা-সন্তানের সাক্ষাতে হাসপাতালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের আবেগাপ্লুত কান্নায় উপস্থিত সবার চোখই ভিজিয়ে দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত