দেবব্রত চৌধুরী লিটন

০৯ জুলাই, ২০১৬ ২৩:২১

বেপরোয়া মোটরবাইক, বিকট শব্দ, সন্ত্রস্ত মানুষ

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার সড়ক। প্রচন্ড জ্যাম। হঠাৎ বিকট শব্দ করে ও হর্ণ বাজিয়ে আসে ৮/৯ টি মোটর বাইক।  মোটর বাইকের বিকট শব্দে আর হর্ণের যন্ত্রনায় জ্যামের মধ্যেও রাস্তা ফাঁকা করে দেয় অন্য পরিবহনগুলো। আতঙ্ক ছড়িয়ে দ্রুত গতিতে মোটর বাইক নিয়ে চলে যায় চালকরা।

ঈদের আগের দিন (বুধবার) দুপুরের ঘটনা এটি। বুধবারই রাতে দেখা যায়, আরো ৭/৮ টি মোটর বাইক যাচ্ছে এই সড়ক দিয়ে। বাইকে একটি বিশেষ ধরণের যন্ত্র যুক্ত করায় পটকা ফোটার মতো শব্দ হচ্ছে। এতো বোমা পড়েছে ভেবে আতঙ্কে অনেকেই  দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করে দেন। মূহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় ব্যস্ত সড়ক। সড়ক দাপিয়ে মোটর বাইক নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে চলে যায় চালক ও আরোহীরা।

এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায় নগরীতে। নগরীতে অনেকটা আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেছে এসব বেপোরোয়া গতির ও বিকট শব্দের মোটর বাইক। এসব মোটরবাইক চালকের সকলেই তরুণ। এরা সবসময়ই দলবেঁধে বের হয়। ৭/৮ বা ১০ টি মোটর বাইক একসাথে হয়ে একই সড়ক দিয়ে যাওয়া আসা করে।

কিছু কিছু মোটর বাইকে আবার সাইরেন যুক্ত করা। বাইক চলার সময় সাইরেনের মতো শব্দ হয়। ফলে দূর থেকেই শব্দ শোনে পুলিশ, এম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেবে এসব মোটর বাইকের জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দেন সবাই।

ঈদের পরদিন (শুক্রবার) বিকেলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঘুরতে গিয়েছিলেন কাজির বাজার সেতুতে। সেখানে গিয়েও দেখা যায় মোটর বাইকের উৎপাত। সেতুর উপর অযথা হর্ণ বাজিয়ে চলছে চালকরা। অকারণে এক্সেলেটর বাড়িয়ে বিরক্ত করছে বেড়াতে আসা মানুষদের। মেয়েদের দেখলেই হর্ণ বাজানো ও এক্সেলেটর বাড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।

এই মোটর বাইক ত্রাসের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হয় নারী ও শিশুরা। আর বিকট শব্দে শব্দ দূষণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সকল নগরবাসীকে।

নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার মোটরবাইক মেকানিক বাদশা মিয়া বলেন, বাইকের সাইলেন্সারের পেছনের অংশ খুলে ফেলে অনেকে। এতে বাইক চলাচলের সময় বেশি শব্দ হয়। এছাড়া অনেকে সাইলেন্সার থেকে একটি পার্টস খুলে ফেলে। যাকে আমরা বাঁশি বলি। এটি খুলে ফেলার ফলেও বিকট শব্দ বের হয়।

একাধিক মোটর বাইক চালক জানান, ভীতি সৃষ্টি করা ও নজর কাড়ার জন্য কেউ কেউ এমনটি করে থাকে। অনেকে আবার নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্নও ব্যবহার করে।  

মোটর বাইকের এই যন্ত্রনায় অতীষ্ট সিলেট এমসি কলেজের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী গোলাম আহমদ চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েণ্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কয় মাস ধরে সিলেট নগরীতে শব্দ দূষণকারী এসব মটর বাইক চলাচল করলেও প্রশাসনের এ ব্যাপারে নীরব। তারা সড়কে এক ধরণের ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। এসব মোর বাইক যখন দলবেঁধে যায় তখন আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।  

এসব মোটর বাইক চালকদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) রহমতউল্লাহ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোটর বাইকের এই উপদ্রবের বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। ঈদের পর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।

এছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতে মোটর বাইক নিয়ে কাউকে বিরক্ত করা না হয় সে ব্যাপারেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত