দেবকল্যাণ ধর বাপন, জাফলং থেকে ফিরে

১০ জুলাই, ২০১৬ ০১:০৮

আঁখি মুঞ্জিয়া দেখো রূপ

ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলছে ঝরনা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি পাথর। দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে নরম তোলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। এই দৃশ্য এক নজর অবলোকন করতে কার না মন চায়।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ছাড়া আর কোথায় দেখা যাবে এমন দৃশ্য!  প্রকৃতির এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতেই ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ে ভিড় করেছেন অসংখ্য পর্যটক। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের একেবারে উপচে পড়া ভিড়। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে একেবারে গাদাগাদি করা অবস্থা।

ঈদের আগে সিলেটের পর্যটন শিল্পকে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যদিও উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। গুলশান হামলার ঘটনায় অনেক পর্যটকই হোটেলের অগ্রীম বুকিং বাতিল করে দিচ্ছিলেন। তবে ঈদের পরদিন থেকেই পাল্টে যায় চিত্র। সিলেটে এবার ঈদেও হাজির হয়েছেন প্রচুর পর্যটক। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটকের পদচারনায় মুখর জাফলং। পর্যটকের চাপে এই সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে যানজট দেখা দেয়। তীব্র যানজটের কারণে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটকদের। ভ্রমনপিপাসু অনেকেই এসময় পায়ে হেঁটেই পোঁছেন জাফলং পর্যটন স্পটে।

জাফলং বেড়াতে আসা মো. মিল্টন মাহাবুব জানান, যশোরের শার্শা উপজেলা থেকে তিনি এসেছেন। তিনি বলেন “এই নিয়ে তিনবার আসলাম। যতোই আসি না কেনো মন ভরে না শুধু মন চায় বারবার আসতে”।

আসবেই না কেনো? যেখানে ঋতু-বৈচিত্র্যের সঙ্গে জাফলংও তার রূপ বদলায়। সৌন্দর্যে আসে বৈচিত্র্যতা। বর্ষায় গেলে এখানে দেখা যাবে ওপারের পাহাড় থেকে নেমে আসা অগণিত ঝরণা। সবুজের বুকে নেমে আসা ঝরনাধারায় সূর্যের আলোর ঝিলিক ও পাহাড়ে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে পর্যটকদের। আবার শীতে অন্য রূপে হাজির হয় জাফলং। চারদিকে তখন সবুজের সমারোহ, পাহাড় চূড়ায় গহিন অরণ্য। ফলে শীত এবং বর্ষা সব সময়ই পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় জাফলং।

জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে গিয়ে আলাপ হয় কাওসার আহমদ নামে এক পর্যটকের সাথে। তিনি জানান, রাস্তার যানজটের কারণে এখানে এসে পৌঁছাতে অনেক কষ্ট হলেও এখনে এসে সব কিছু ভুলে গেছি।

নাগরিক জঞ্জাল আর কোলাহল ছেড়ে দু’দণ্ড শান্তি খুঁজে নিতে তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও দলবেঁধে জাফলংয়ে বেড়াতে এসেছেন পর্যটকরা।

জাফলং পিকনিক সেন্টারের মুক্তি স্ন্যাকসের কর্ণধার মরম আলী জানান, পর্যটকের সমাগম ভালই হয়েছে। আমাদের বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তবে রাস্তাঘাট ভালো থাকলে আরো পর্যটকের সমাগম হতো। আমাদের বেচাকেনাও আরো ভালো হতো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত