শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ

১০ জুলাই, ২০১৬ ২৩:৩২

বৈকন্ঠপুর চা বাগানে শ্রমিকদের রেশন-মজুরি বন্ধ, বিক্ষোভ

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বৈকন্ঠপুর চা বাগানে ৯ সপ্তাহ যাবত রেশন মজুরী বন্ধ রয়েছে। বিছিন্ন করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও। ৬ মাস ধরে বন্ধ আছে চিকিৎসা সেবা। চা উৎপাদনের কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরফলে বিপাকে পড়েছেন চা শ্রমিকরা।

এ অবস্থায় বাগান বাঁচাতে আন্দোলনে নেমেছেন চা শ্রমিকরা। রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন ধরণের প্লেকার্ড হাতে নিয়ে বাগানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চা শ্রমিক সংগঠন।

এতে বক্তৃতা করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা নিপেন পাল, ইউপি সদস্য বাবুল চৌহান, চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রামনাথ কেউট, সাধারণ সম্পাদক মনিব কর্মকার, জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবি দাস ও পম পলি হক। সমাবেশে লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিকেলে মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৩ ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করলেও তা সফল হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোন ফলাফল ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

বক্তারা বলেন, একদিকে রেশন মজুরি বন্ধ। অন্যদিকে শ্রমিকদের বিকল্প কোন কাজের সুযোগ নেই। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে তারা জীবনযাপন করছেন। পুরো চা বাগানটি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অসুখে বিসুখে মরছে শ্রমিকরা। কিন্তু আমাদেরকে দেখার কেউ নেই। শ্রমিক নেতারা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ২৪ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছে।
জানা গেছে, ব্যাক্তি মালিকানাধিন বৈকন্ঠপুর চা বাগান অর্থ সংকটে পড়ে বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে।

গত ১৭ মে থেকে শ্রমিকদের মজুরী তলব না পেয়ে শ্রমিকরা অর্ধহারে অনাহারে দিন যাপন করছেন। ইতিমধ্যে তারা প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, বাগান কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দাবিনামাও দিয়েছেন। এদিকে বাগানের মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে বিবদমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রোববার বিকেল ৩টায় শ্রীমঙ্গল ডেপুটি ডিরেক্টর অব লেবার অফিসে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মালিক পক্ষের প্রদীপ মুখার্জি বৈঠকে বসেন। বিকেল সাড়ে ৬টায় বৈঠক শেষ হলেও কোন ফল আসেনি। বৈঠক শেষে চা শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রামনাথ কেউট ও সাধারণ সম্পাদক মনিব কর্মকার জানান, হঠাৎ করে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে গত ১৭ মে থেকে মজুরি  বন্ধ করে দিয়েছেন। মজুরী না পেয়ে শ্রমিক পরিবারে হাহাকার শুরু হয়েছে। চা শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের লেখাপড়া ও চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় ৩ হাজার শ্রমিক পরিবারের মধ্যে চড়ম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

অমলা নামে এক নারী চা শ্রমিক বলেন, হঠাৎ করে তলব বন্ধ করে দেয়ার ফলে সন্তানদের নিয়ে এখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সরকার যদি আমাদের দিকে নজর না দেয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

বাগানের চলতি দায়িত্বে থাকা মরণ চক্রবর্তী জানান, টাকার অভাবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো নোটিশ না দিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা মজুরী বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরা মারাত্মক কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে। বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবি দাস জানান, আন্দোলনে ২৩টি চা বাগানের পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ করতে না পারায় গত ২৮ জুন থেকে বাগানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। আর ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতাল।

মাধবপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, বাগান মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা চলছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত