জাহিদুল ইসলাম সবুজ

২১ আগস্ট, ২০১৬ ১৯:০৫

খুনের পর খুন: এই হিংসার শেষ কোথায়?

ফাইল ছবি

ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর শানু পরিবারের সাথে একই এলাকার প্রবাসী  ফারুক-হাফিজদের বিবাদের শুরু সেই ২০১৩ সাল থেকে। এই বিবাদে এ পর্যন্ত ৩ টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সাবেক কাউন্সিলর শানুর ছোটো ছেলে সোহান ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। মদনমোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সোহান সেদিন ছোটবোনকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। খুলিয়াপাড়া গলির মুখে চোখে মরিচ ছিটিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার জের ধরে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে খুন হন ছাত্রদল নেতা কামাল আহমদ। যিনি ফারুক-হাফিজদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

এই ঘটনায় শানুর স্বামী তাজুল ইসলাম, ছেলে রায়হান ইসলাম এবং শানু সহ আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন কামালের স্ত্রী হ্যাপি বেগম। পুলিশ  রায়হান ইসলামকে আটকও করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু সহিংসতা থেমে থাকেনি,  জামিনে মুক্তি পাওয়ার ৪/৫ দিন পরই ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর  রায়হান ইসলামকে একই কায়দায় কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত রায়হানকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন শানু নিজেও। এই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে রায়হানকে। সিলেট ও ঢাকার একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসার পরেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে প্রেরণ করা হয়।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বছরের শুরুর দিকে  শানুর স্বামী তাজুল ইসলামের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। শানুর তখন অভিযোগের তীর সেই পুরনো প্রতিপক্ষের দিকেই তোলেছিলেন। এ ঘটনার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা  মিলে একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও এই বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় নি। কিছুদিন আগে শানুকে তাঁর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে একদল অস্ত্রধারীসহ ফারুক-হাফিজ অনুসারীরা হামলা চালায় বল অভিযোগ করেন শানু, কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে সে যাত্রা সফল হয়নি তারা। তাজুল-শানু পরিবারের ওপর দায়ের করা হয় একগুচ্ছ মামলা, এর মধ্যে কামাল হত্যা মামলা, রাজধানীর পল্টন থানায় নারী নির্যাতন মামলা, সিলেটের ওসমানী নগর থানায় নারী নির্যাতন মামলা, কোতোয়ালী থানায় কেয়ারটেকার অপহরণ মামলা।

সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট রাতে বাড়ি ফেরার পথে তাজুল ইসলামের ওপর হামলা করে একদল সন্ত্রাসী। নৃশংসভাবে কুপিয়ে তাঁর দুই পা ও হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর এলাকার কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায় নি। তাজুলকে এবার যখন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হল তখন শানু  তার বড়ছেলে রায়হানকে চিকিৎসা করাতে ভারতে অবস্থান করছেন।

তাজুলকে হত্যার পরদিন তাদের এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পুরো এলাকা নিরব-নিস্তব্ধ। এ ব্যাপারে কেউ কোন কথাও বলতে চাইছেন না। এলাকার বেশিরভাগ দোকানপাটও বন্ধ ছিল সারাদিন। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন মামলা দায়ের হয়নি। জানা গেছে শাহানারা বেগম শানু বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছেন। তিনি এসেই সব সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহভানের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর রয়েছে।

এ ব্যাপারে তাজুল ইসলামের বড় ভাই নুরুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এক পরিবারের ওপর এতো অত্যাচারের পরও প্রশাসন নির্বিকার। ছোট ছেলে সোহান হত্যার বিচার যথাযথ হলে আজ এই দিন দেখতে হতোনা।"

তিনি বলেন, "ফারুক-হাফিজরা একাধিকবার বলেছে তারা প্রশাসনের অনেক বড় কর্তা ব্যক্তিদের সাথে উঠাবসা করেন, আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু এখন আর অবিশ্বাসের কোনো কারণ দেখছিনা, কারণ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র দেড়শো গজের দূরত্বে যারা এভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে তারা সত্যিই অনেক প্রভাবশালী। আমি কারো কাছে কিছুই চাইনা, আমার ভাই-ভাতিজার হত্যার বিচার চাই।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত