তপন কুমার দাস, বড়লেখা

২২ আগস্ট, ২০১৬ ২১:১১

মৌলভীবাজারের জেল সুপারের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার চেষ্টা, বড়লেখা থানায় জিডি

আব্দুল কুদ্দুছ স্বপন

মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানায় দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বন্দি আব্দুল কুদ্দুছ স্বপন নামের এক হাজতির পরিবারকে প্রতারণার চেষ্টা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রটি হাজতি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মুমূর্ষু জানিয়ে অপারেশনের জন্য ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছিল।

এ ঘটনায় হাজতি বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনের ভাই বড়লেখা থানায় জিডি করেছেন। তিনি উপজেলার সরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সত্তারের ছেলে।

থানার জিডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট রাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় বড়লেখা থানা পুলিশ দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনকে গ্রেপ্তার করে পরদিন বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।

১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি কল আসে। ফোনকলটি রিসিভ করার পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি জানায় আব্দুল কুদ্দুস স্বপন জেল হাজতে স্ট্রোক করেছেন। সংবাদটি তাহার ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিতে অনুরোধ জানায়। ইউপি সদস্য আজিজ তাৎক্ষণিক ফোনটি স্বপনের ভাই আব্দুল বাছিতের কাছে দেন।

তখন অপর প্রান্তের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাছিতকে জানায় ‘আপনার ভাই স্ট্রোক করেছেন, জেল সুপারকে তাড়াতাড়ি ফোন করেন।’ তখন ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কথিত জেল সুপারের মোবাইল নম্বর দেন। আতংকিত অবস্থায় স্বপনের ভাই তাৎক্ষণিক কথিত জেল সুপারের সাথে যোগাযোগ করলে অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয় ‘হ্যালো আমি জেল সুপার বলছি।’ আপনার ভাই স্ট্রোক করেছেন, তাহাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। উনার অবস্থা আশংকাজনক ডাক্তারের ফোন নম্বর দিচ্ছি, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেন।

এই কথা বলে কথিত জেল সুপার ডাক্তারের ফোন নম্বর দেন। ডাক্তারের ফোনে তখন স্বপনের ভাই যোগাযোগ করলে ডাক্তার বলেন ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনার ভাইয়ের অপারেশন করতে হবে। না হলে বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা রয়েছে।

জেল সুপার সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা বহন করবেন। আপনাদের ৬০ হাজার টাকা বহন করতে হবে। আপাতত বিকাশ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা পাঠান। বাকী টাকা হাতে রেডি রাখেন বলে কথিত ডাক্তার একটি বিকাশ ফোন নম্বর দেন। অসুস্থতার কথা শুনে আতংকিত আব্দুল কুদ্দুসের ভাই বড়লেখা বাজারে আসেন বিকাশ করতে। তখন এক আত্মীয় টাকা পাঠাতে বাধা দিয়ে বলেন আমি জেলারের সাথে কথা বলি। তিনি মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন হাজতি আব্দুল কুদ্দুছ স্বপন সুস্থ এবং কারাগারেই রয়েছেন।

তখন আব্দুল কুদ্দুস স্বপনের ভাই এটা কোন প্রতারক চক্রের কাজ বুঝতে পেরে ওই রাতে বড়লেখা থানায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জিডি করেন (জিডি নং-৫১৩)।

হাজতির ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘ফোন কলটি পেয়ে আমরা আতংকিত হয়ে পড়ি। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বুঝতে পারি এটি একটি প্রতারক চক্রের কাজ।

মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের সুপারিন্টেনডেন্ট (সুপার) আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সোমবার বিকেলে বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গা থাকতে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। এখন মনে হচ্ছে মৌলভীবাজারেও এ চক্রটি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করায় হাজতির পরিবার প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ব্যাপারে হাজতিসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত