নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ আগস্ট, ২০১৬ ২২:৫২

কি ঘটেছিলো খাসিয়াপল্লী সংগ্রাম পুঞ্জিতে?

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের খাসিয়াপল্লী সংগ্রাম পুঞ্জি। একেবারে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম।  সোমবার ভোরে এই পুঞ্জিতে অভিযান চালিয়ে স্টেলিন তারিয়াং নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। খাসিয়া রানী নিরোলা থমসনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

গোয়ানইঘাট থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনের দাবি, নিরোলার বাড়িতে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠি বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র জড়ো করেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি এ অভিযান চালান। অভিযানকালে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এসময় পুলিশও পাল্টাগুলি ছুঁড়ে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিজেসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন।

গুলিবিনিময়ে ৭ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, গোয়ানাইঘাট থানার ওসি এমনটি দাবি করলেও তাদের কেউই গুলিবিদ্ধ হননি বলে জানান তিনি। আহতদের কেউ হাসপাতালেও ভর্তি হননি। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে দাবি ওসির। গোলাগুলিতে সন্ত্রাসীদের কারো আহত হওয়ার তথ্যও নেই ওসির কাছে।

এ ব্যাপারে খাসিয়া জনগোষ্ঠির গ্রাম সংগ্রাম পুঞ্জির একাধিক বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করলে, তারা মধ্যরাত কিংবা ভোররাতে গোলাগুলির কোনো শব্দ শোনেননি বলে দাবি করেছেন। তবে তাদের কেউই নাম প্রকাশ করতে চান নি।

সন্ত্রাসীদের পরিচয় পাওয়া গেছে কী না- সোমবার সকালে ওসি দেলোয়ার হোসেনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছিলাম, সীমান্তের ওপার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এনে ওই বাড়িতে জড়ো করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা ভারতীয় কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠি হতে পারে। তিনি বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা ভারত সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়।

ওসির এমন দাবির প্রেক্ষিতে সকালেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সিলেট থেকে ছুটে যান গোয়াইনঘাটে।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেন নি।

সন্ধ্যা পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, 'সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামানের নির্দেশনায় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সোমবার ভোর সাড়ে ৩টায় সংগ্রাম পুঞ্জির নিরালা থমসনের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় সময় দুষ্কৃতিকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে বাড়িতে অবস্থানরত ৪/৫ জন সন্ত্রাসী বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে ভারতের সীমানার দিকে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় পুলিশ গোয়াইনঘাট থানার সংগ্রাম পুঞ্জির জহিনল কংয়াংয়ের ছেলে স্টেলিন তারিয়াং (৩২) কে গ্রেফতার করে।

এ বাড়ী তল্লাশি করে পুলিশ ২টি বিদেশী পিস্তল, ১টি কাটা বন্দুক, ১টি স্নাইপার গান, ২৩ রাউন্ড গুলি, ২টি বড় রামদা, ১টি ছোরা ও ৩টি খাসিয়া দা উদ্ধার করে। এসময় সন্ত্রাসীদের গুলির আঘাতে সৃষ্ট স্প্রিন্টারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সগণ আহত হন।'

এএসপি সুজ্ঞান চাকমা স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গোলাগুলির কথা উল্লেখ করলেও সন্ত্রাসীরা ভারতীয় কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠির কী না এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর গোয়াইনঘাট থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনের সাথে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফের দাবি করেন, অবশ্যই এরা ভারতীয় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হবে। নতুবা এতো আগ্নেয়াস্ত্র পায় কি করে?

ওসি বলেন, এ ঘটনায় আটক স্টেলিন তারিয়াংকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্টেলিনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।

খাসিয়া রানী নিরোলা থমসন দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা যায় নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত