নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ অক্টোবর, ২০১৬ ১৫:৩৯

আসছে শীত, বাড়ছে পাখিশিকারীদের উৎপাত

আগে সিলেট ছিল পাখির অভয়াশ্রম। সিলেটের বাসা-বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন হাওরে ছুটে আসত পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা এসব পাখির কিচির, মিচির শব্দে ভরে উঠত হাওর এলাকা। পাখির উড়াউড়ি, ঘোরাঘুরি তাদের কিচিরমিচির শব্দ সাধারণ মানুষকে সব সময় মাতিয়ে রাখত। গত কয়েক বছর ধরে সিলেটে পাখির আগমন অনেকটা কমে আসছে। তার একটাই কারণ বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন নতুবা কৌশলে ফাঁদ পেতে পাখি ধরে বিক্রি করা।

শিকারিদের উৎপাতে পাখি আগমন কমে আসলেও বন্ধ হয়নি প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি। গত কয়েকদিনে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার লালকুঠি সিনেমা হলের সামনে, রংমহল পয়েন্টের সামনে, সোবহানীঘাট পয়েন্টে, হরিপুর বাজার, বিয়ানীবাজারের দুবাগ শেওলা সেতুর সামনে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, জুড়ি ও কুলাউড়ার বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান গেছে।

ঋতু হিসেবে এখনও শীত না এলেও গ্রামাঞ্চলে এরই মধ্যে শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়েছে। আর এরমধ্যে শীতের আগমনী বার্তায় বিল ও হাওরগুলোতে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি।

সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি করছে একদল লোক। মোবাইল বা ক্যামেরা দেখামাত্র তারা মুখ লোকাচ্ছেন। একইভাবে বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ শেওলা সেতুর টোল প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের বাসিন্দা. নজরুল ইসলাম জানান, অতিথি পাখিদের নিষ্ঠুর হায়েনার মতো শিকার করছে এক শ্রেণির অকৃতজ্ঞ লোক। শুধু তাই নয় অনেকেই আবার পাখি শিকার করে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে।

তিনি জানান, তার বাড়ির পাশের বাজারেও প্রতিদিন পাখি বিক্রি করা হয়। আর এসব পাখির কেনার গ্রাহকও উচ্চবিত্ত। কখনো পাজেরো, কখনো বিলাসবহুল গাড়ির ভেতর থেকে দাম দর করেই পাখি কিনে নিতে দেখেন।

বিয়ানীবাজারের মাথিউরা ইউনিয়নের নালবহর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, গত কয়েকদিনে দুবাগ এলাকার শেওলা সেতুর সামনে পাখি বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ীকে। মোবাইল ফোনে ছবি উঠাতে চাইলে তারা মুখ লুকিয়ে রাখে।

তিনি আরও জানান, একজোড়া বালি হাস ৬’শ টাকা দাবি করে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া হাওর সহ আটালী বিল, ডুম চাতল বিল, বড় বিল, দিঘাই বিলসহ এখানকার স্থানীয় হাওর-বাওরে অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়। আর এরপর থেকেই শুরু হয়েছে এসব পাখি শিকারে পেশাদার শিকারিদের তৎপরতা।

মৌলভীবাজার জেলার বৃহত্তম হাকালুকি, কাউয়াদিঘী, হাইল হাওরসহ হাওর অঞ্চলে অতিথি পাখি আসে। বর্তমানেও সুদূর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুতেই অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠে হাকালুকি হাওর ও আশপাশের হাওর অঞ্চল। এবার কিছুটা পাখি আগে ভাগেই আসতে শুরু করেছেন বলে তারা জানান।  

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ (ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড ন্যাচার প্রটেকশন) বিভাগের ডিএফও (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) মিহির কুমার দো জানান, আমরা শুনেছি বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে পাখি বিক্রি হয়ে থাকে। তিনি যেখানে পাখি বিক্রি হয় সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে বলার জন্য অনুরোধ করেন। হাওরে আসা অতিথি পাখিরা যাতে শিকারিদের কবলে না পড়ে সে বিষয়ে ওয়াচাররা কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

দ্য সাইবেরিয়ান টাইমসের তথ্যমতে, শীতের তাড়া খেয়ে একটু উষ্ণতার খোঁজে এসব পরিযায়ী পাখি প্রথমে উপকূলীয় এলাকায় নামলেও দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওরসহ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা বিয়ানীবাজার, বড়লেখা, মৌলভীবাজার অঞ্চলের হাওর-বাওরে আশ্রয় নেয়। অতিথি পাখি আসার আন্তর্জাতিক দুটি রুটে পড়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। ভারত হয়ে সেন্টাল এশিয়ান রুট এবং চীন হয়ে অস্ট্রেলেশিয়া রুট। এই দুটি রুটে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে। উপকূলীয় এলাকায় আগস্ট মাসে এবং সিলেটের হাওরাঞ্চলে অক্টোবরের মাঝামাঝি শুরু হয় পাখি আসার মৌসুম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত