মারূফ অমিত

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:২৬

তবু জয় করার প্রত্যয়

তবলা , হারমোনিয়াম নিয়ে সবাই একসাথে গান করছেন 'আমরা করব জয় , আমরা করব জয় , আমরা করব জয় নিশ্চয়। আহা বুকের গভীর, আছে প্রত্যয় আমরা করব জয় নিশ্চয়'। তাদের মুখে হাসি। সবাই খুব প্রফুল্ল।

দুপুরে খাবারের পর আমরা প্রায়ই গান বাজনা করি। ম্যাম আমাদের সংগীত শিখান। আমাদের নিখিল খুব ভালো তবলা বাজাতে পারে।

গ্রিন ডেসিবল ফাউন্ডেশন পরিচালিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী সোহেলা আক্তার এমনটাই জানালেন। 

আজ শনিবার (৩ ডিসেম্বর) পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০১৬। 'টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ি, ১৭টি লক্ষ্য অর্জন করি' ই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সারা দেশের মতো সিলেটেও যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। প্রতিবন্ধী দিবসে সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় ছিল গ্রিন ডেসিবল ফাউন্ডেশন পরিচালিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। চোখের আলো না থাকলেও জ্ঞানের আলো দিয়ে আলোকিত করতে চান সমাজকে।

সোহেলার সাথে কথা বলে জানা গেলো, ২০০৬ সাল থেকেই তিনি এ ফাউন্ডেশনের আবাসিক ছাত্রী হিসেবে আছেন। চলতি বছর এস এস সি পাশ করে তিনি এইচ এস সি প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছেন।

তিনি জানান, সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে সবাই একসাথেই আছেন হোস্টেলে। বাড়ির চেয়ে এখানে আনন্দ তার অনেক বেশি।

তার পাশেই বসে আছেন জোবেদা খাতুন। ভবিষ্যৎ ইচ্ছা একজন আইনজীবী হবেন। তিনি জানালেন, এখানে কাটানো দিনগুলো অনেক ভালো। সবার অনেক সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন। তবে বাড়ির জন্যও তার মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। যখনই মন খারাপ হয় তখন তার বন্ধুরা তাকে মন ভালো করে দেবার চেষ্টা করে।

পাশে বসে মিটিমিটি হাসছিলেন কয়েছ মিয়া এবং কামরান হোসেন। কথা বলে জানা গেলো, মাঝে মধ্যেই তাদের টুকটাক বিরক্ত করেন অন্যরা। তবে সবাই একে ওপরেকে খুব ভালোবাসেন। কয়েছ মিয়া জানান, এক ঘরে থাকলে ত মান অভিমান হবেই। আমাদের ভাই বোনের সম্পর্ক সবার মাঝেই।

সবার মাঝে একটু ভিন্ন নিখিল চন্দ্র। তবলা বাজান। তবলা বাজানো তার শখ। তিনি জানান, সুযোগ পেলেই আমি তবলা বাজাই, ভালো লাগে।

তবে এদের সবার অভিযোগ ব্রেইল পদ্ধতিতে খুব ভালো ভাবে গণিত করা যায় না বলেই তাদের কেউই এইচ এস সি তে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালিখা করতে পারেন নি।

স্কুলের শিক্ষিকা রোমানা আক্তার এবং শারমিন আক্তার জানান, স্টুডেন্টদের সাথে থেকে তাদের খুব ভালো লাগে। পড়ালেখায় মুটামুটি সবাই ভালো।

তারা জানান, আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা আমাদের স্টুডেন্টরা এ বছর এস এস সি পাশ করেছে।

স্কুলের প্রশিক্ষক বায়েজিদ খান জানান, স্কুলের নির্বাহী পরিচালক, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি মোঃ রজব আলী খান নজিব আজ একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। আমাদের স্কুলের ১৫ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে ১০ জন আবাসিক। আমরা শতভাগ চেষ্টা করছি আমাদের বাচ্চাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার। আমরা জয় করবই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত