নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১২:০২

রাগীব আলীর প্রতারণার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

বিতর্কিত শিল্পপতি রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে একটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আজ সকাল থেকে সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

বিকেলে একই আদালত রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা অপর একটি মামলার রায় প্রদান করা হবে। দুটি মামলাই তারাপুর চা বাগান সংশ্লিষ্ট। হাজার কোটি টাকার এই দেবোত্তোর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে রাগীব আলীদের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

সকালে সিলেট মহানগর মূখ্য হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগান দখল মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু করেন। আজ ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। এই মামলার মোট সাক্ষী ৩৩ জন।

এ মামলায় রাগীব আলী, তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদিরকে আসামি করা হয়।

অপরদিকে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি মামলার আসামী রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই। আজ বিকেল ৩ টায় এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।

সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো বুধবার এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের এই দিন ঠিক করে দেন।

এ মামলায় তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন‌্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়েছে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।

মামলা হওয়ার ১১ বছর পর সিলেটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান গত ১০ জুলাই ওই দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

৭৮ বছর বয়সী রাগীব আলী বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। ওই ব‌্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ‌্য অনুযায়ী, চা বাগান থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও মিডিয়াতে ছড়িয়ে আছে তার ব‌্যবসা।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ‌্য অনুযায়ী, চা বাগানের ব‌্যবসার লাভের কিছু অংশ দান করে রাগীব আলী সিলেটে ‘দাতা’র খ্যাতি পান। বেসরকারি বিশ্ববিদ‌্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে ‘শিক্ষানুরাগী’ নামও কুড়ান।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সিলেটের এই ধন‌াঢ‌্য ব‌্যক্তি পালিয়ে ভারতে চলে গেলেও গতবছর শেষদিকে তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

এ আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান জানান, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর জালিয়াতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১১ জনের সাক্ষ্য ও জেরার পর শুরু হয় যুক্তিতর্ক।

তারাপুর চা বাগান নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করে।

এর বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গত ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই আদেশের পর ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।

ওই দুই মামলায় গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সিলেটের আদালত। ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

গতবছর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় লুকিয়ে দেশে ফেরার চেষ্টার ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী।

ওই দিনই তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।

ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের নিয়ে প্রকাশিত বার্ষিক সাময়িকী ‘হু’জ হু’র তথ‌্য অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালে ১৮ বছর বয়সে লন্ডনে যান রাগীব আলী। সেখানে শেয়ার বাজার, বীমা, আবাসন ও রেস্তোরাঁ ব‌্যবসা করে তিনি বিত্তশালী হন। পরে দেশে এসে ব‌্যবসায় হাত দেন।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ‌্য অনুযায়ী, রাগীব আলী সিলেট টি কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী টি কোম্পানি লিমিটেড, রাজনগর টি কোম্পানি লিমিটেডের মালিক।

ইউনিয়ন সিন্ডিকেট লিমিটেড, রাগীব আলী সিকিউরিটিজ লিমিটেড, দৈনিক সিলেটের ডাকে তার মালিকানা রয়েছে। ইংরেজি দৈনিক ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের পর্ষদেও তার নাম রয়েছে।

সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লিডিং ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প‌্যাসিফিকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম‌্যান তিনি। এক সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ‌্যালয়ের বোর্ডেও চেয়ারম‌্য‌ান ছিলেন তিনি।

নিজের, স্ত্রীর এবং মায়ের নামে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন রাগীব আলী। মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত