জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

০৬ এপ্রিল, ২০১৭ ২২:২৮

জগন্নাথপুরে ৭ দফা দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন, ইউএনও অফিস ঘেরাও

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরে বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা লুটপাটকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথপুরের সর্বস্তরের কৃষক-জনতা।

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার পৌর পয়েন্টে মানববন্ধন, সমাবেশ ও ইউএনও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন তারা।

জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল মনাফের সভাপতিত্বে ও হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ছিদ্দিকুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হাওর পাড়ের চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান চৌধুরী, হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল, পৌরসভার প্যানেল মেয়র শফিকুল হক শফিক, সাবেক কাউন্সিলর মো. লুৎফুর রহমান, জগন্নাথপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক মো. সানোয়ার হাসান সুনু, কাউন্সিলর আবাব মিয়া, মো. দিলোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী মিন্টু রঞ্জন ধর, আবুল হোসেন ডালিম, কৃষক মাসুক মিয়া, জামাল হোসেন প্রমুখ।

সামাবেশে শেষে ৭ দফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন বিক্ষুব্ধ কৃষক-জনতা। পরে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শামীম আল-ইমরান কৃষকদের দাবি-দাওয়া পূরণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বেলা ২টার দিকে কৃষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন। এসময় ইউএনওর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

৭ দফা দাবিগুলো হচ্ছে-

১। এবারের হাওর তলিয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী নলুয়া, মই হাওরের বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দকৃত ৬ কোটি টাকা লুটপাটকারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসির সভাপতি ও সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
২। জগন্নাথপুর উপজেলাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে উপজেলার সকল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড বিতরণের ব্যবস্থা করা।
৩। আগামীতে নলুয়ার হাওরে স্থানীয় কৃষকদের সাথে পরামর্শক্রমে টেকসই উচ্চতা সম্পন্ন বেড়িবাঁধ ও স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা।
৪। অবিলম্বে খোলা বাজারে সরকারি চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা।
৫। কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করা।
৬। আগামী কৃষি মৌসুমে পর্যাপ্ত কৃষিঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিনামূল্যে কৃষকদের কৃষি উপকরণসহ বীজ, সার, তেল সরবরাহ করা।
৭। জগন্নাথপুর উপজেলার ভরাট হয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদী, নলজুর নদী, কাটাগাংসহ সকল নদী, খাল, বিল খননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উল্লেখ্য, এবার জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া ও মই হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের অধিকাংশ স্থানে মাটি ফেলা হয়নি। উপযুক্ত উচ্চতার বেড়িবাঁধ না থাকায় অরক্ষিত হাওরগুলো সহজেই বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকদের মধ্যে চলছে তীব্র হাহাকার। এলাকায় খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন অনেকেই। গত ২/৩ দিন থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে চালের দাম অগ্নিমূল্য ধারণ করেছে। প্রতি কেজি চাল ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৫০ কেজি চাল ১ সপ্তাহ আগে যেখানে ছিল ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতি রোধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত