
১৩ মে, ২০১৫ ১০:২০
মৌলভীবাজারে বৈশাখী মেলা, বিজয় মেলা আর পাহাড়ী মেলার নামে চলছে জুয়া, লটারী, অশ্লীল নৃত্য, ভেরাইটিজ শো । জেলার পাঁচটি এলাকায় গত এক বছর ধরে চলছে এই সব অসামাজিক কার্যকলাপ। স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ১০-১৫দিন বন্ধ থাকলেও স্থান এবং ব্যানার পরিবর্তন করে আবার শুরু হয় মেলার নামে অবৈধ কার্যকলাপ। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। নষ্ঠ হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এই সব বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের নিরবতায় উদ্বিগ্ন সচেতন মানুষ।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সাইফুর রহমান ষ্টেডিয়ামে গত পহেলা মে থেকে বৈশাখী মেলার নামে শুরু হয়েছে জুয়া, লটারী ও ভেরাইটিজ শো। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে মঙ্গলবার (১২-মে) মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ২৪৩ জন নাগরিকের স্বাক্ষর দিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ সময় স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহিরুল ইসলাম।
স্মারকলিপিতে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজান, পৌর ৩নং ওয়াড কাউন্সিলর মোঃ নাহিদ হোসেন, ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদসহ পৌর এলাকার রঘুনন্দনপুর, উত্তর জগন্নাথপুর, বনবিথি , উত্তর ও দক্ষিণ কলিমাবাদ, চুবড়া, সোনাপুর এলাকার বাসিন্দারা স্বাক্ষর করেছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে স্মরকলিপি প্রদান করেন মাওলানা সাদিকুর রহমান,মো: লিয়াকত আলী,আব্দুর নুর,,হাজী তোয়াব উল্লা,সাজাদুর রহমান,সাইফুল ইসলাম জুনেদ,হুমাউয়ন কবির,সাহবুউদ্দিন আহমদ,মোঃ রাসেল আহমদ,নুরুল হুদা,শফি মাহমুদ,সুমন মিয়াসহ অনেকেই।
এ সময় স্বারকলিপি দিতে আসা এলাকাবাসী জানান, ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি মৌলভীবাজার শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকায় এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে বৈশাখী মেলার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এর প্রভাবে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। শহর ও শহতলীতে বাড়ছে চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড। বিপথগামী হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্ম। এক শ্রেণির স্বার্থন্বেষী মানুষ সরকারী দলের ছত্রছায়ায় এই ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এর ফলে আইনশৃঙখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশংকাও করছেন সচেতন মানুষ।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, সংস্কৃতি রক্ষার নামে অপসংস্কৃতির চর্চা হতে পারে না। আর যেভাবে বিভিন্ন স্থানে মেলার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে তা দেশ ও সমাজের স্বার্থে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কোন সুস্থধারার মানুষ এ সব অপকর্ম সমর্থন করে না। মেলার নামে অশ্লিলতা বন্ধে গত ১০ মে জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
স্মারকলিপির অনুলিপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এমপি , মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদকে প্রদান করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্মারকলিপি আমরা পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
এদিকে মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান ষ্টেডিয়াম ছাড়াও বর্তমানে সদর উপজেলার শেরপুর, সাধু হাটি, কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগীরি, রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নে চলছে মেলার নামে জুয়া, লটারী, অশ্লিল নৃত্য, ভেরাইটিজ শো।
উল্লেখ্য, সচেতন মানুষ অভিযোগ করে বলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহাদুর পুর গ্রামে ডিসেম্বর-–জানুয়ারী মাসে চলে যাত্রাগান,জুয়া আর অশ্লিল নৃত্য। পরে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে যাত্রা প্যান্ডেলের আসর ভেঙ্গে দেয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর স্থান পরিবর্তন হয়।
একই সাথে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারী-১৫ইং পর্যন্ত মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় মেলার নামে চলে লোভনীয় লটারী ,বাম্পার ও জুয়া। পরে এক পর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর প্রতিবাদে বন্ধ হয়।
এরপর শুরু হয় মৌলভীবাজার প্রেমনগর চা বাগানে পাহাড়ী মেলা। চলে মেলার নামে মাসব্যাপী লটারী ও অসামাজিক কার্যক্রম। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ হয় ।
মৌলভীবাজারের রাজনগরে এসএসসি পরীক্ষার সময় চলে লটারী ও যাত্রা। ফলে লটারীর মাইকিং-মাথাই নষ্ঠ মামা আর যাত্রা মঞ্চের হিন্দি -বাংলা কুরুচিপূর্ণ গানের শব্দে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এস এস সি পরীক্ষাথীরা। প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে রাজনগর উপজেলার নন্দীউড়া এলাকায় যাত্রার নাম করে অবৈধ জুয়া ও লক্ষ লক্ষ টাকার লটারী বাণিজ্য। রাত দিন রিকসা-ভ্যান,মিনি ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে গাড়ী-মটর সাইকেলযোগে মাইকিং করে লটারী বিক্রি। লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে একটি প্রতারক চক্র প্রতিদিন এসব স্থান থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা।
বিভিন্ন মেলার স্লোগান নিয়ে চলা এসব মেলায় নামে মাত্র পণ্য সামগ্রীর ষ্টল থাকলেও এই সিন্ডিকেটের মুল লক্ষ্য লটারী ও জুয়ার নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় ওই সব সিন্ডিকেট মাসের পর মাস এসব অপর্কম করলেও যেনো দেখার কেউ নেই। এদিকে ধারাবাহিকভাবে চলা অবৈধ এই কার্যকলাপের ফলে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হওয়ার পাশাপাশি এলাকার তরুণ ও যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরণের অপরাধে। প্রতিদিন লটারী ও জুয়ার টাকা জোগার করতে গিয়ে বাড়ছে চুরি,ছিনতাই। পাশাপাশি বসছে ওয়ানটেন,চরকি নামের জুয়ার বোর্ড। এসব জুয়ার বোর্ডে দীর্ঘদিন টাকা বিলিয়ে দিয়ে ক্রমাগত নিঃস্ব হতে চলেছে সাধারণ শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষ।
অপরদিকে তার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দাড়িয়েছে ২০টাকা মূল্যের লটারীর ড্র টিকেট। পরীক্ষার সময়ে যাত্রা-জুয়া,অশ্লিল নৃত্যে: লটারী বিক্রি বন্ধে স্মারকলিপি পেশ করে স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। মেলা বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারের প্রশাসনের কর্মকর্তারাও যেনো নির্বিকার। এসব অবৈধ কার্যকলাপে প্রশ্রয় দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনগর নন্দীউড়া, মৌলভীবাজারের শেরপুর, আথানগীরি, মৌলভীবাজার ষ্টেডিয়ামে যাত্রার নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৃত্য ও যাত্রা শিল্পীদের এনে রাতজুড়ে চলছে অশ্লীল নৃত্য । এ সব স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত বসানো হয় বিভিন্ন ধরণের জুয়ার জমজমাট আসর। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় অসাধু লোকদের পৃষ্টপোষকতা ও আশ্রয়ে এসব অপকর্ম চলছে। তবে অনেকে মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচেছন না। ফলে ধারাবাহিকভাবে চলা এসব অপকর্মের কোন প্রতিকার না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
আপনার মন্তব্য