নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জুলাই, ২০১৭ ০২:৫৭

ওসমানী নগরে রড ছাড়াই কলেজ ভবন, ভাঙলেন সাংসদ

সিলেটের ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার মহিলা কলেজে রড ছাড়াই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এমপি শনিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে এর সত্যতা পেয়েছেন।

সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কলেজের কাজ শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে সাংসদ নতুন ভবনের একাংশ (পিলার) ভেঙে দেখতে পান, অনেকটা রড ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন। তিনি সংশ্লিষ্ট ৩ জনকে হাতেনাতে আটক করলেও এক ঠিকাদারসহ কয়েকজন পালিয়ে যায়।

বিষয়টি জানার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে ওই এলাকায়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, রড তো নেই-ই, বাঁশ পর্যন্ত দেয়া হয়নি পিলারে। এর চেয়ে বড় দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট আর কী হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কক্ষের দেয়ালের পিলার ও লিন্টার রড ছাড়াই ঢালাই করা হয়েছে। এটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুষ্পা এন্টারপ্রাইজের কাজ।

শুধু তা-ই নয়, ভবনের অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নমানের মালামাল। কাজে এমন অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর তিন ও চারতলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহ আলম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম ও তার দুই সহযোগী পংকি ও লোকমানকে আটক করে ওসমানীনগর থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার এমপি এহিয়া কলেজের নির্মাণকাজ সরেজমিন পরিদর্শন করবেন, সেটা জানানো হয়েছিল। উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে।
তবে ভবন তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম দাবি করেন, কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক চলছে।

সংসদ সদস্য এহিয়া প্রকৌশলী তাজুলসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুষ্পা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাখাল দে কে শনিবার ঘটনাস্থলে থাকতে বলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য এহিয়া শনিবার কলেজে গেলে তারা দু’জনই অনুপস্থিত থাকেন। ভবনের কাজে নিয়োজিত পুষ্পা এন্টারপ্রাইজের নির্মাণ শ্রমিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দ্রুত। যাওয়ার আগে অনিয়মের মাধ্যমে নির্মিত ভবনের লিন্টারের কিছু অংশও ভেঙে ফেলে তারা।

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের জন্য চারতলা একাডেমিক ভবনের প্রথম দুই তলার ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পায় রাখাল দে’র প্রতিষ্ঠান।

ওই বছরের ১৩ আগস্ট ভবনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী। ২০১৭ সালের জুনে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ভবনের তিন ও চারতলার কাজ পায় শাহ আলম এন্টারপ্রাইজ।

সম্প্রতি পুষ্পা এন্টারপ্রাইজের কাজে বড় অনিয়মের অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে অনিয়মের বিষয়টি হাতেনাতে ধরেন এমপি। লিন্টার ভাঙলে দেখা যায়, কক্ষগুলোর পিলারের ভেতরে রড নেই।

শুধু পাথর, সিমেন্ট ও বালু দিয়ে সিসি করা হয়েছে। কক্ষের কিছু কিছু লিন্টারের ভেতর যে মাপের রড দেয়ার কথা ছিল, সে মাপের চেয়ে ছোট রড দেয়া হয়েছে। আবার রড দিয়ে জালি দেয়া হয়নি। অনিয়মের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হওয়ায় এমপি ভবন নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল মুকিত আজাদ জানান, সম্প্রতি ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এখন তো হাতেনাতে প্রমাণ মিলেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিলেটের উপপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।

ওসমানীনগর থানার ওসি সহিদ উল্যা বলেন, এমপি তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুষ্পা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অভিযুক্ত রাখাল দে নির্মাণকাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, ভবনের মূল বেইস পিলারসহ সবক’টির রড ঠিক মতো দিয়ে কাজ করা হয়েছে। একজন নতুন মিস্ত্রি কক্ষের লিন্টার ও পিলারে রডের জালি না দিয়ে ঢালাই করে ফেলেছিল। সেগুলো এরই মধ্যে আমরা ভেঙে ফেলেছি, কিন্তু এখন তো কাজ করার সুযোগ আমাকে দেয়া হচ্ছে না।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভবন তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত তাজুল ইসলাম নির্মাণকাজে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভবনের মূল কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি।

আমাদের না জানিয়ে ঠিকাদার কিছু কাজ করেছিল। যেটাতে অনিয়ম হয়েছে, সেটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। পুনরায় কাজ করে দেয়া হবে। ঘটনাস্থলে শনিবার উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত