আহমেদ সেলিম, মৌলভীবাজার

১৬ আগস্ট, ২০১৭ ১১:৪৫

টিলার চুড়োয় ঝুঁকি নিয়ে বাস: যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

মৌলভীবাজারে বিভিন্ন টিলার চুড়োয় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার নিরাপদে সরে আসার আহ্বান করা হলেও শুনছেন না তারা। এতে ভয় কেবল বাড়ছেই। যেকোনো সময় ঘটতে পাড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

এরআগে, জেলার বড়লেখা উপজেলায় পাহাড় ধসে এক মা ও মেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার বড়লেখা, জুড়ী ও কমলগঞ্জ উপজেলায় অনেক উঁচু নিচু পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ের চুড়োতে পাহাড়-টিলা কেটে আবাসস্থল বানিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব এলাকায় বিভিন্ন সময়ে টানা বৃষ্টি ও পাহাড় কাটার ফলে ভূমিধসের আশংকা বাড়ছে।
বড়লেখা উপজেলার ডিমাই, শাহবাজপুর এলাকা, জুড়ী উপজেলার ভজিটিলা, কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে। এসব স্থানে খাসটিলার চুড়ো ও নিচে বাস করা বেশিরভাগ মানুষই বাস্তুহারা। গত কয়েকমাস আগে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলে জুড়ী উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভজিটিলার বাসিন্দাদের পাশের কেবি ইয়াহিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে তারা সরে যায়। এখন আবার মাইকিং করে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে এবং কেবি স্কুলে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু চৌধুরী জানান, ভজিটিলায় ৩০-৪০ টি পরিবার বাস করছে। তাদের মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

এদিকে, বড়লেখা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ টি ইউনিয়নেই রয়েছে পাহাড় ও টিলা। এসব টিলায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছেন কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ ডিমাই এলাকায় অন্তত ৫ হাজার মানুষ খাসজমিতে টিলা কেটে বাড়িঘর বানিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিও টিলার মাটি কাটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ১৭ জুন উপজেলার ডিমাই এলাকার-ই বিওসি কেছরীগুল (বতাউড়া) গ্রামে টিলাধসের ঘটনা ঘটে। এতে আছিয়া বেগম ও তার মেয়ে স্কুলছাত্রী ফাহমিদা বেগম নিহত হয়। এসবের পরেও টিলার উপর থেকে বাসিন্দারা সরে যাচ্ছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান বলা যাচ্ছে না বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে মাইকিং করে ও অন্যান্যভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। কি পরিমাণ বাসিন্দা রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউপি জানবে।

অপরদিকে, জেলার অপর উপজেলা কমলগঞ্জের কালেঙ্গা এলাকায় টিলার উপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিনানিপাত করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। টিলা থেকে নেমে বাসস্থানের কোন সুযোগ না থাকায় এভাবেই থাকতে হচ্ছে বলে জানান তারা। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হক কালেঙ্গা এলাকা পরিদর্শনও করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হক জানান, উপজেলার কয়েকটি এলাকায় টিলার মধ্যে কালেঙ্গাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। অনেকেই শুনছে না।  

এদিকে কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে এ মাইকিং করা হয়।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মধা, ভাটেরা ও বরমচাল ইউনিয়নের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ টিলার ওপর ও পাদদেশে কয়েক শতাধিক পরিবার বসবাস করে। তিন-চার দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় টিলাধসের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌ. মো. গোলাম রাব্বী শনিবার সকালে ইউনিয়নগুলোর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ টিলা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি (ইউএনও) ইউপি চেয়ারম্যানদের মাইকিং করাতে বলেন। বিকেলে মাইকিং করা হয়।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌ. মো. গোলাম রাব্বী বলেন, কতটি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, এর তালিকা তৈরি করতে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত