সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৩:৩৯

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জে আটক

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে সুনামগঞ্জে আসা ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। জেলার তাহিরপুর উপজেলায় এসে অবৈধভাবে নাগরিকত্ব গ্রহণ ও স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে।

পালিয়ে আসা ১১ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬ জনকে গত ১৭ জুলাই নাগরিকত্ব সনদ দিয়েছেন তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন। এর মধ্যে ৫টি নাগরিকত্ব সনদ জব্দ করেছে পুলিশ।

আটককৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন, মিয়ানমারের আকিদাবাদ জেলার মংদু থানার কুয়ান শিবং গ্রামের সাকির আহমদের ছেলে আব্দুছ ছবুর (৫১), স্ত্রী আমিনা বেগম (৪২), ছেলে আব্দুল হালিম (২৩), মেয়ে হালিমাতুস সাহিয়া (১২), মেয়ে তালিহা আক্তার (১৫), মেয়ে উম্মা বেগম (২), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী উম্মূল খাইরিন (২২)  ও মেয়ে মোশারফা (১)।

আটককৃত ১১ জনের মধ্যে আব্দুছ ছবুর, আমিনা বেগম, আব্দুল হালিম, হালিমাতুস সাহিরা, তালিহা আক্তার ও উম্মূল খাইরিনসহ মোট ৬ জন অবৈধভাবে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব সনদ পেয়েছেন।
 
বাদাঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই তপন কুমার দাস জানান, প্রায় ৩ মাস পূর্বে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র আল আমিনের বসত বাড়িতে এই রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছিল। পুলিশ তাদের হাজির হওয়ার জন্য খবর দিলে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তারা স্বেচ্ছায় নাগরিকত্ব সনদসহ পুলিশ ক্যাম্পে হাজির হয়। তখন তাদের আটক করা হয়।

পুলিশ জানায়, গুটিলা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে আল আমিন চট্টগ্রামের হাটহাজারিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তার সাথে ওই রোহিঙ্গা পরিবারের মোহাম্মদ ও আহম্মদের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে রোহিঙ্গা পরিবারকে সে নিজ গ্রামে নিয়ে আসে এবং নাগরিকত্ব ও জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে দেয়। এরপর আল আমিন ওই রোহিঙ্গা পরিবারের দুই সদস্যকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে যায়। গত তিন মাস ধরে ওই রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা তাহিরপুরের বিভিন্ন গ্রামে আত্মগোপন করে ছিলেন। সম্প্রতি তারা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা এবং গুটিলা গ্রামে বসত-বাড়ি নির্মাণ করেন।

তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, গোপন সূত্রের খবর পেয়ে ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হবে। ওই পরিবারের সদস্যদের বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান নাগরিকত্ব ও জন্ম সনদ প্রদান করেছেন। ৫টি নাগরিকত্ব ও জন্ম সনদ আটককৃতদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। গুটিলা গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র তাদেরকে এই এলাকায় নিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদেশি লোকদের অবৈধভাবে নাগরিকত্ব ও জন্ম সনদ প্রদানের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি লেখা হবে।
 
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, আটককৃত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হবে। নাগরিকত্ব ও জন্ম সনদ প্রদানের বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত