শাহ শরীফ উদ্দিন

১৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:১৯

লোকবল সংকটে চালু হচ্ছে না সিলেটের ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র’

প্রকল্প শুরু হওয়ার পর ৪ বছর কেটে গেলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি সিলেটের টিলাগড় ইকোপার্কে নির্মিত ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র’।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রকল্পের প্রায় সকল কার্যক্রম শেষ হলেও কেবলমাত্র লোকবল সংকটের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর উপকন্ঠে অবস্থিত ১১২ একরের এ বন্যভূমিকে ২০০৬ সালে ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার পর থেকেই ইকোপার্কের উন্নয়নে গৃহিত হয় নানা পদক্ষেপ। গৃহিত এ সকল পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র’।

১০ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পে সংরক্ষণ কেন্দ্রের স্থাপনা ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়ের বাইরেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিলো ইকোপার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

সিলেট বন বিভাগ জানায়, বাজেট ১০ কোটি টাকা হলেও মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সকল কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

এ প্রকল্পের আওতায় ইকো পার্কে প্রবেশের দুটি পথেই গেট ও টিকিট কাউন্টার নির্মাণ, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য শেড ও খাঁচা নির্মাণ, অফিস কক্ষ, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং একটি রেস্টুরেন্টের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রদর্শনের জন্য ২টি বাঘসহ ১৮টি বন্যপ্রাণী ইতোমধ্যে কেনা হয়েছে, যা গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রাখা হয়েছে।

এ সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রদর্শনের জন্য বাঘ, ভাল্লুক, বানর, জেব্রা, হরিণ, হাতি, সাপ, ময়ুরসহ বিভিন্ন ধরণের পাখি এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ করা হবে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএসএম মুনিরুল ইসলাম বলেন, সকল কার্যক্রম শেষ হলেও কেবল লোকবল সংকটের কারণে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইকো পার্ক ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের জন্য একজন পশু চিকিৎসকসহ বিভিন্নপদে ২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি প্রয়োজন, যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৩ জন বনরক্ষী রয়েছেন।

মুনিরুল ইসলাম বলেন, “লোকবল নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। অন্তত চিকিৎসকসহ কিছু লোকবল নিয়োগ পেলেই কেন্দ্রটি পুর্নাঙ্গ ভাবে চালু করা হবে”।

গত মঙ্গলবার টিলাগড় ইকোপার্ক এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইকোপার্কের দুটি ফটকের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে টিকিট কাউন্টার। ভিতরের বিভিন্ন অংশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি খাঁচা ও শেড। শিশুদের খেলাধুলার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দোলনা ও স্লিপার।
পুরো ইকোপার্ক জুড়েই দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য স্থায়ী বেঞ্চও নির্মাণ করা হয়েছে।

ইকোপার্কের ভিতরে কথা হয় নগরীর বালুচর এলাকার বাসিন্দা মুমিনুর রহমান শাওনের সাথে। তিনি বলেন, সময় পেলে বন্ধুবান্ধব মিলে এখানে ঘুরতে আসি। কিন্তু বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গেটে নাম লেখা থাকলেও এর কোন কিছুই হয়নি এখন পর্যন্ত। বরং দীর্ঘদিন ধরেই এ সকল স্থাপনা অব্যবহৃত থাকায় জং ধরে ও ভেঙে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দোষরোপ করে বলেন, প্রথম যখন এ সংরক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয় তখন আমরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু এত দিনেও এটি চালু না হওয়ায় আমরা আশাহত হয়েছি।

তিনি বলেন, “সিলেটের নানা অংশে নানা সময় বন্য প্রাণী ধরা পড়ে, যা উদ্ধার করে সংরক্ষণের জন্য হলেও এ কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করা প্রয়োজন”।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের জন্য লোকবল নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। লোকবল নিয়োগ হলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত