সিলেট সদর উপজেলার পূর্ব শাহী ঈদগাহে অবস্থিত সদর উপজেলা খেলার মাঠ। আশেপাশের শিশু-কিশোরদের খেলার চাহিদা পূরণের তাগিদেই এখানে টিলা কেটে খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি এখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়।

আইন অনুযায়ী খেলার মাঠে খেলা ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার কিংবা ভাড়া দেওয়া অপরাধ। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করেই সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ (বর্তমান শেখ রাসেল স্টেডিয়াম) বছরের পর বছর মাঠ থাকে মেলা কিংবা পশুর হাটের দখলে। এতে করে মাঠের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় শিশু, কিশোর ও তরুণরা বঞ্চিত হচ্ছে খেলাধুলার সুযোগ থেকে।

খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় সাজার বিধান আছে। তবে, এই আইনের কোন রূপ তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিতে ‘খেলার মাঠে মেলা’ করার ফের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বুধবার দুপুরে সিলেট ৪র্থ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। যদিও আয়োজকদের দাবি, তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খেলার মাঠ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই মেলার আয়োজন শুরু করেছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা মাঠ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে খুঁটি স্থাপনের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।

এরপর থেকে স্থানীয়রা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। মেলা আয়োজনের প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সভাও করেছেন বৃহত্তর শাহী ঈদগাহ এলাকাবাসী। এলাকার মুরব্বি মনজু জামানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের’ বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মাঠকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করার ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। রুবেল আহমদের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন শাহী ঈদগাহ এলাকার মুরব্বি তারু মিয়া। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জমান সেলিম।

তিনি খেলার মাঠে মেলা ও গরুর বাজার স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেন। একই সাথে খেলার মাঠ রক্ষায় সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন, মানব বন্ধন, বিভিন্ন ধরণের খেলার আয়োজন করা, জাতীয় দিবসে শিশু কিশোরদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন ও এলাকায় খেলোয়াড় তৈরির জন্য বিকেএসপি থেকে কোচ নিয়োগের প্রস্তাব করেন।

প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, গুলজার আহমদ। প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন আমিনুর রহমান খোকন, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী লিটন, শাহীন আহমদ, সাকের আহমদ, হীরা আহমদ, মো. হারুন, স্বপন আহমদ, শাহীন আহমদ, শাহজাহান আহমদ, জাহিদ আহমদ, ফাহিম আহমদ, মনির উদ্দিন, ফয়সল আহমদ, আব্দুর রউজ,  ফেরদৌস আহমদ, সুমন আহমদ প্রমুখ।     

স্থানীয়রা জানান, এবারই প্রথম নয়। এই খেলার মাঠে কয়েক বছর ধরে এমই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে, পাশাপাশি কোরবানির সময়ে পশুর হাটও বসানো হয়। ফলে বছরের প্রায় আট মাস মাঠ ব্যবহারে অনুপযোগি থাকে। এতে করে স্থানীয় এলাকার শিশু-কিশোর-তরুণরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।