মাধবপুর প্রতিনিধি

০৫ মার্চ, ২০১৮ ২২:২৭

বীর বিক্রম আব্দুর রহমান আর নেই

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৭১এর সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম হাবিলদার আব্দুর রহমান (৮০) আর নেই। সোমবার (৫ মার্চ) সকালে বড়ধলিয়া তার নিজ বাড়িতে মারা যান।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাদ আসর জগদীশপুর তেমুনিয়ায় জানাজা শেষে সিলেট সেনানিবাসের লে: আবরার এর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের সেনাসদস্যরা তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক মুহাম্মদ জাকারিয়া ও মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বড়ধলিয়া গ্রামে জামে মসজিদের পাশে তাজে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুতে সংসদ সদস্য এড. মাহবুব আলী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল হেলাল মুর্শেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা ক্যাপ্টেন অব: কাজী কবির উদ্দিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান, ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মালেক মধু, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতা নিজামুল হক রানা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীদাম দাশগুপ্ত প্রমুখ শোক ও মরহুম পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বীর বিক্রম আব্দুর রহমান মাধবপুর উপজেলার বড়ধলিয়া গ্রামে ১৯৩৭ সালে ১২ মে জন্ম গ্রহণ করেন। ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। জগদীশপুর জেসি হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে ১৯৫৮ সালে তিনি সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ শেষে কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রথম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন।

পরে ১৯৬৫ সালে তিনি লাহোরের বিডিয়া সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানে এসে যশোহর সেনানিবাসে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তেলিয়াপাড়া বাঁশ বাড়িতে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৭১ সালের ৬ মে তেলিয়াপাড়া হেড কোয়াটারে একটি শক্তিশালী আক্রমণ রচনা করে। ওই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসময় তাকেও পাক সৈন্যরা ধরতে এগিয়ে আসেন। তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে কয়েকজন পাক সেনাকে হত্যা করে।

এমতাবস্থায় তার উপর শত্রুপক্ষ বহুগোলা নিক্ষেপ করে। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে একটি মেশিন গান দিয়ে বেপরোয়াভাবে পাক সৈন্যদের উপর গুলিবর্ষন করতে থাকে। তার এই গুলিবর্ষণে প্রায় শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। পাক বাহিনী পিছু হঠতে বাধ্য হয়।

যুদ্ধ ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৭ সালে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে অবসরের পর জীবিকার তিনি সাতছড়ি চা বাগানে “নো ওয়ার্ক নো পে” ভিত্তিতে প্রহরীর কাজ করতেন। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর বীর বিক্রমের ভাতা ভোগী হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত