নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ মার্চ, ২০১৮ ২৩:৪০

সকালে শাবিতে গিয়ে হামলার ছক কষে ফয়জুর

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শনিবার সকালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে যায় হামলাকারী ফয়জুর। সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে হামলার ছক কষে সে। এরপর ওইদিন বিকেলে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে হামলা চালায় ফয়জুর। জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনা তদন্ত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই সূত্র জানায়, ফয়জুর সকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখতে পায় একটি অনুষ্ঠান চলছে। সেখানে জাফর ইকবালকে ঘিরে অনেক শিক্ষার্থীরা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সকলের পরনে কালো টি শার্ট। এরপর সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শেখপাড়ার বাসায় গিয়ে কালো টি শার্ট পরে ও ছুরি নিয়ে আবার ক্যাম্পাসে যায়। বিকেলে মুক্তমঞ্চে  ই ই ই বিভাগের ফেস্টিবল চলাকালে অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলা চালায় ফয়জুর।

সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াও জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে হামলার আগে ওইদিন সকালে ফয়জুর আরেকবার ক্যাম্পাসে যায় বলে তারা তদন্তে জানতে পেরেছেন।

তবে এই হামলায় ফয়জুর একাই অংশ নেয়, না আর কেউ ছিলো তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়নি ফয়জুর কোনো জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত কী না।

পুলিশের ধারণা জঙ্গিবাদী আদর্শে উদ্ভূদ্ধ হয়েই এ হামলা চালিয়েছে ফয়জুর। এমনটি ধারণা র‌্যাবেরও।

পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ফয়জুর অনেকদিন থেকে জঙ্গিবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলো বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। সে এখনো অসুস্থ। হাসপাতালে আছে। সুস্থ হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।

এঘটনায় আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া রোববার রাতেই নগরীর জালালাবাদ থানায় আত্মসমর্পণ করেন ফয়জুরের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান ও মা মিনারা বেগম। তারা গোয়ান্দা পুলিশের কাছে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া শনিবার হামলার পরই ফয়জুরের মামা ফজলুকে আটক করে পুলিশ। এর র‌্যাব-৯ এ পর্যন্ত ফয়জুরের চাচাসহ ৩ জনকে আটক করেছে।

হামলার ঘটনার পরই জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। রোববার রাতে সেদিন দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

হামলার পূর্ব মুহুর্তের একটি ছবিতে দেখা গেছে জাফর ইকবাল শাবির মুক্তমঞ্চে চেয়ারে বসে আছেন। তার পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশ সদস্য মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে হামলাকারী ফয়জুর। ফেসবুকে এই ছবিটি দিয়ে পুলিশের সমালোচনা করেন অনেকে।

তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, পুলিশের দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিলো না। বরং জাফর ইকবালকে পুলিশই উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে।
দু’জনকে প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য নয়, দায়িত্বরত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে দু’জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এদিকে কেবল হামলাকারীকে বিচার আওতায় না এনে এ নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খোঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার শাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে এ দাবি জানান তারা। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মবিরতি দিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষকরা।  সোমবারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস পরীক্ষা হয়নি।

বিক্ষোভ চলছে সিলেট নগরীতেও। সোমবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নগরীতে গণজাগরণ মঞ্চ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করে।

এই ঘটনা তদন্তে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার থেকে তাদেও কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান শাবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল গনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচী: পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী সোমবার সকাল ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন শাবি শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এই কর্মসূচীতে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদও যোগ দেন।

কর্মবিরতি চলাকালে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও জাফর ইকবালের উপর হামলার নেপথ্যের লোকদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ শেষে প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মৌন মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করেন।

সোমবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরাও। বিকেলে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

উল্লেখ্য,শনিবার বিকেলে শাবির মুক্তমঞ্চে একটি ফেস্টিভাল চলাকালীন ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করে ফয়জুর রহমান নামে এক যুবক। ফয়জুরকে হাতেনাতে আটক করে গনপিটুনি দেয় শিক্ষার্থীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত