নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ মার্চ, ২০১৮ ২৩:০৪

মাহিদ হত্যা: দায়ি ছিনতাইকারী না অন্যকেউ?

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহিদ আল সালাম খুন হয়েছেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এম এ সালামের কনিষ্ঠ পুত্র মাহিদ খুন হলেন ঠিক ২৫ মার্চ রাতে। পাকিস্তানিদের ভয়াবহ গণহত্যার জন্য যে রাতটি কালরাত নামে পরিচিত।

রোববার রাতে দক্ষিণ সুরমায় দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে মাহিদকে। পরে পুলিশ উদ্ধার করে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ছিনতাইকারীরাই মাহিদকে ছুরিকাঘাত করে। পরিবারেরও এই মত। তবে মাহিদের সহপাঠী ও শিক্ষকদের অনেকেরই সন্দেহ এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কেউ থাকতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তাদের।

মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এম এ সালাম ও এডভোকেট আমিনা সালামের ছেলে মাহিদ। নগরীর মদিনা মার্কেটে বাসা তাদের। দুই ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মাহিদ। বড় দুই বোন ডা. ফারহানা সালাম ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফসানা সালাম। আর ভাই সাঈদ সালাম যুক্তরাজ্য প্রবাসী।

মাহিদ শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।। প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলনেও অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে। সর্বশেষ অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে গত ৫ মার্চ শাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন মাহিদ। এই সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার একটি ছবি নিজের ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি করে রেখেছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে মাহিদের সম্পৃক্ততার কারণে তাঁর হত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে সন্দেহ অনেকের।


মাহিদ হত্যাকাণ্ডের পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জফির সেতু ফেসবুকে লিখেন- 'পুলিশ ভাইয়েরা, মাহিদের ব্যাপারে এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েন না।... সঠিক তদন্ত করুন। সত্য খুঁজে বের করুন। এই মিনতি করছি।'

প্রশাসনের সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকেই।

যদি হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতেই খুন হন মাহিদ। যদিও এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের সনাক্ত বা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে সোমবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি।

দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, মাহিদকে ছিনতাইকারীরাই ছুরিকাঘাত করে বলে মনে হচ্ছে। হালকা ধরণের অস্ত্র দিয়ে তাঁর উরুতে আঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় যাওয়ার জন্য রোববার রাতে বাসা থেকে বের হন মাহিদ। কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো তাঁর। তবে বাস টার্মিনালে পৌঁছার আগেই ছুরিকাহত হন মাহিদ।

মাহিদের চাচা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল বলেন, রাত ৩ টার দিকে পুলিশ ফোন দিয়ে আমাকে মাহিদের খবর জানায়। ছিনতাইকারীরাই তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে পুলিশ আমাদের জানায়।

তিনি বলেন, মাহিদ খুব নিরীহ টাইপের ছেলে। তাঁর কোনো শত্রু থাকার কথা নয়। তাছাড়া তাঁর ঢাকায় যাওয়ার কথা পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ জানতো না। এমনকি মাহিদের বন্ধুরাও না। ফলে আমরাও ধারণা করছি ছিনতাইকারীরা এ হামলা চালাতে পারে।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শাবিপ্রবি প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা ছুরি দিয়ে তাঁর উরুতে আঘাত করে। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি রগ ছিঁড়ে যায়। ফলে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায় মাহিদ। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর।

ছুরিকাঘাতের পর মাহিদকে উদ্ধারকারী দক্ষিণ সুরমা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রিপন বলেন, রাস্তার পাশে একটি যুবক পড়ে থাকতে দেখে আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে হামলাকারীদের কাউকে পাইনি।

এদিকে, মাহিদের মরদেহ সোমবার রাতে সিলেট ডায়াবেটিকস হাসপাতালের ময়চুয়ারিতে রাখা হয়।

কর্মসূচি
মাহিদ আল সালাম হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপদ সিলেট নগরীর দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সকাল ১১ টায় ভার্সিটি গেইট থেকে চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা, দুপুর ১২ টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচি ও দুপুর সাড়ে ১২ টায় জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের জন্য পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা।

এছাড়া বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে শাবির সাবেক শিক্ষার্থীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত