সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ মে, ২০১৮ ২০:২৭

যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে মুক্ত করেছিলাম সে স্বপ্ন আজ আহত: কামাল লোহানী

বইপড়া উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ

সিলেটে ইনোভেটর আয়োজিত বইপড়া উৎসবে মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে পুরস্কার পেল ‘ওরা ১১ জন’।

বুধবার (৯ মে) এ উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বইপড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা-ত্যাগ-সংগ্রাম আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও আজকের তারুণ্যকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় বাঙালীর ইতিহাসপ্রেমী ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুদের মিলনমেলায়। সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত বিভাগের শিল্পীদের পরিচালনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

আলোচনা সভায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লেখক, সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ুয়ারাই আগামীর বাংলাদেশ। জ্ঞানের আলোর কাছে সকল অন্ধকার পরাজিত হবেই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কখনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার কাছে পরাজিত হতে পারেনা। আজকের তরুণরাই জ্ঞান, নীতি ও নন্দন চর্চার মাধ্যমে রচনা করবে আগামীর বাংলাদেশ। জ্ঞানের আলো দিয়ে বিকৃতির তমসাকে পরাস্থ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে বাঙালীর বীরত্বগাঁথাকে নিজেদের অন্তরে আত্মস্থ করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, বইয়ের প্রয়োজন কখনো ফুরায় না। মানুষের সুদিন-দুর্দিন, সকল সময়েরই বিশ্বস্ত বন্ধু বই। আর মুক্তিযুদ্ধের বই হচ্ছে দর্পণের মত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেন্দ্রিক বইয়ে চোখ রাখলে নিজেকে জানা যায়, নিজেকে চেনাও যায়।

কামাল লোহানী আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যৎ রচনা করা সম্ভব নয়। যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা দেশকে মুক্ত করেছিলাম আজ সে স্বপ্ন আহত। আজকের প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে কেউ কখনো এ দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না।

তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সকল অপশক্তি আর কূপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে জ্ঞানই একমাত্র লড়াইয়ের শক্তি। বই একমাত্র অনির্বাণ অস্ত্র।

ইনোভেটরের মুখ্য সঞ্চালক সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাসদ সভাপতি লোকমান আহমদ।

উক্ত অনুষ্ঠানের শুরুতে বইপড়া উৎসবের পথচলার গল্প বলেন ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব।

ইনোভেটরের সংগঠক তাসনিয়া মিজান চৌধুরী এবং আশরাফুল ইসলাম অনির যৌথ উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অম্বরীষ দত্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি শামসুল আলম সেলিম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ, কবি ও গবেষক ড. মোস্তাক আহমাদ দীন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, নারী মুক্তি সংসদের সভানেত্রী ইন্দ্রানী সেন, স্কলার্স হোমের শিক্ষিকা জেবুন্নেছা জীবন, ইনোভেটরের সংগঠক প্রভাষক সুমন রায় এবং বইপড়া উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী মো. রেদওয়ান আহমদ।

বইপড়া উৎসব ২০১৭-১৮ আসরে স্কুল পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার অর্জন করেন বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মৌমিতা তালুকদার মৌ। এছাড়া সেরা পাঠক পুরস্কার অর্জন করেন স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী তাসফিয়া চৌধুরী তমা, ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী লাবিবা তাহসিন আঁখি, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র বিশ্বাস সৌধ, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুছরাত জামান মীম।

অন্যদিকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার পেয়েছেন মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হোসেন বাবর। সেরা পাঠক নির্বাচিত হয়েছেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী তৌহিদা আক্তার, এমসি কলেজের শিক্ষার্থী রমিকা বনিক, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাসনিমা সাজনিন প্লপা, রাগীব রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. হাসান এবং কানাইঘাট কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. নাদিয়া ইসলাম।

বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রদান করা হয়। এছাড়া বইপড়া উৎসবের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠানে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।

‘জ্ঞানের আলোয় অবাক সূর্যোদয়!/ এসো পাঠ করি/ বিকৃতির তমসা থেকে/ আবিস্কার করি স্বাধীনতার ইতিহাস’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বইপড়া উৎসবের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। এ বছর এ আয়োজনটি একযুগে পদার্পন করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত