সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ মে, ২০১৮ ১৭:৫৪

অনন্ত বিজয়কে ফুল দিয়ে স্মরণ, দ্রুত বিচার ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি

সিলেটের বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার তিন বছর পূর্ণ হওয়ার তাঁকে হত্যার স্থানের সেই কালো দেয়ালচিত্র সাদা করে ফুল দিয়ে স্মরণ করা হয়েছে।

শনিবার (১২ মে) সেই সঙ্গে অনন্ত হত্যা মামলার দ্রুত বিচার ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বিচার শুরু হয় নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের তৃতীয় বার্ষিকী উদযাপনে আদালতে বিচার শুরুর বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে সেই কালো দেয়ালচিত্র সাদা করে অনন্তকে স্মরণ করা হয়েছে। সাদা দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের প্রতীকী চিহ্নের মধ্যে বেলা একটায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

দেয়ালচিত্র স্থাপনের উদ্যোক্তা আইনজীবী মইনুদ্দিন আহমদ জালাল, অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলির সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, সমাজ অনুশীলনের সদস্য সচিব মুক্তাদীর আহমদ, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী ছামির মাহমুদ, এলাকাবাসীর পক্ষে দস্তিদার দীঘি সংরক্ষণ কমিটির দপ্তর সম্পাদক শাহিদ আহমদ সিদ্দিকী ও মিঠুন দত্ত ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপরে এক মিনিট নীরবতা পালন করে দেয়ালচিত্রে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অনন্তের বন্ধু অরূপ দাশ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রভাষক এনামুল হক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নগরনাটের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল চক্রবর্তী, শিক্ষক অহী আলম রেজা, বাসদ সিলেটের সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল।  

এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রণব জ্যোতি দাসের নেতৃত্বে সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ মে বাসার সামনে মুখোশধারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন অনন্ত বিজয় দাশ (৩২)। নগরের সুবিদবাজারের নূরানী আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে তাঁকে।

ঘটনাস্থলের এক পাশে পিটিআইয়ের সীমানাপ্রাচীর। অনন্ত বিজয় দাশের শুভানুধ্যায়ীরা এলাকাবাসীর সহায়তায় দেয়ালের একাংশ কালো করে ওই বছরই তৈরি করেছিলেন দেয়ালচিত্র ও স্মৃতিফলক।

অনন্ত বিজয় দাশ পূবালী ব্যাংকের জাউয়াবাজার শাখায় ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। এর পাশাপাশি পাশাপাশি তিনি বস্তুবিদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত বিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ যুক্তি নামে একটি পত্রিকা নিয়মিত সম্পাদনা করতেন। সিলেটে পরিচালিত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঘটনার একদিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চার দুর্বৃত্তকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।

২০১৬ সালের ১২ মে দেয়ালচিত্র উন্মোচন করে প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছিল। এর পরের বছর হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপনে ভিন্নতা আনা হয়। ২০১৭ সালের ৯ মে হামলাকারীদের শনাক্ত করে ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করায় বিচারের আশা জাগে অনন্তের পরিবার সহ শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত