
২৮ জুন, ২০১৫ ১৫:৩০
সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদানকালে চা শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
এতে ওই সংগঠনের লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক লাংকাট লোহার, অজিত দাশ, শিলা কুর্মীসহ ৭ জন শ্রমিক আহত হন।
জানা যায়, রোববার দুপুরে বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করতে মিছিলসহকারে ওই কার্যালয়ে যায় চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। এসময় কার্যালয়ের ভেতরে সবাবেশ করা নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের সাথে বাবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ইউসুফের নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাবেশে উপস্থিত চা শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়।
পুলিশের উপস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। এই হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বক্তরা হামলাকরীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এরআগে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার দুপুর ১২টায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি পেশের পূর্বে সিলেটের বিভিন্ন চা বাগান থেকে আগত চা শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিসম্বলিত ফেস্টুনসহ মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি লাক্কাতুরা চা বাগান থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার আহবায়ক বীরেন সিং এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হৃদেশ মুদি, সংগঠন মালনীছড়া বাগান শাখার সভাপতি সন্তোষ নায়েক, লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক লাংকাট লোহার প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, চা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। আর এই চা তৈরি হয় চা শ্রমিকদের রক্তে-ঘামে। কিন্তু কেমন আছেন চা শ্রমিকরা ? সীমাহীন দারিদ্র ও পুষ্টিহীনতার শিকার এই অবহেলিত জনগোষ্ঠি। উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর মাত্র ৬৯ টাকা মজুরি দিয়ে নূন্যতম পুষ্টির চাহিদা পূরণ তো দূরের কথা ক্ষুধার অন্নটুকু পর্যন্ত জোটে না। এর সাথে রোগ বালাই তো লেগেই আছে। প্রায় ৮ মাস আগে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের সময় সকল পক্ষ বলেছিলেন দ্রুত নতুন চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন, নির্ধারন করবেন মানবোচিত মজুরী। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি ।
বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন দ্বিগুন বৃদ্ধি করার। এর সাথে সাথে বাজারে দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। প্রায় দুইবছর পূর্বে নির্ধারিত ৬৯ টাকা মজুরি দিয়ে চা শ্রমিকদের জীবন চলবে কিভাবে? তাই অবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন ও ৩০০ টাকা মজুরী নির্ধারন, ভূমির অধিকার নিশ্চিত করনসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বক্তারা আগামীদিনের এই লড়াই সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শত শত চা শ্রমিকদের স্বাক্ষরসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাবেরা আক্তার।
আপনার মন্তব্য