নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ০০:৩৯

সিলেটে বিদ্রোহীতে বিপাকে আ. লীগ, স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

উ্রপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেট বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সোমবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে সিলেটের ১২ উপজেলার মধ্যে ৯টিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এদিকে, এ নির্বাচনে অংশ না নিতে দলীয় নেতাদের বিএনপির কেন্দ্র থেকে হুশিয়ারি দিলেও তা মাননেননি স্থানীয় নেতারা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে সিলেটের ৫টি উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতারা।

সোমবার সিলেট জেলার ১২ উপজেলায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫৬ জন প্রার্থী। ১২ উপজেলার মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সাথে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিদ্রোহীরাও। এছাড়া ৫টি উপজেলায় স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। কয়েকটি উপজেলায় বিএনপির একাধিক নেতাও প্রার্থী হয়েছেন।

২য় দফায় আগামী ১৮ মার্চ সিলেটের ১২ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আভ্যন্তরীন কোন্দল আর একাধিক প্রার্থীর কারণে গত উপজেলা নির্বাচনেও সিলেটে ভরাডুবি ঘটেছিলো আওয়ামী লীগের। সে নির্বাচনে ১২টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতেই পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিদ্রোহীদের ঠেকাতে না পারলে এবারও গত নির্বাচনের পুণরাবৃত্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দলের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণল সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় কেন্দ্র থেকে প্রার্থী চুড়ান্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিদ্রোহের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের আমরা প্রার্থীথা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাবো। তা না শুনলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনপি নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, বিএনপির পদধারী কেউ প্রার্থী হননি। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সাথে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সিলেট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭ জন। এদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশফাক আহমদ ছাড়াও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরে আলম সিরাজী, বিএনপির শাহজামাল নুরুল হুদা ও মাজহারুল ইসলাম ডালিম।

এই উপজেলায় আরেক আ্ওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেলেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হননি।

বিশ্বনাথে দলের বিদ্রোহ ঠেকাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এস এম নুনু মিয়া। এছাড়াি স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন, উপজেলা আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সভাপতি ফয়জুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ময়নুল ইসলাম।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন। বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম। এছাড়া বিএনপির সর্মথক হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ওহিদুজ্জামান ছুফি, প্রবাসী হারুনুর রশীদ চৌধুরী, তালামিয নেতা হারুনুর রশীদ ও প্রবাসী মনির মিয়া।

বালাগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪ জন। তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান মফুর, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদাল মিয়া, জাতীয় পার্টির আব্দুর রহিম এবং স্বতন্ত্র গোলাম রাব্বানী।

জৈন্তাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত আলীর পাশাপাশি দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল আহমদও মনোনয়নপত্র জমা দেন।

গোয়াইনঘাটে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন গোলাম কিবরিয়া হেলাল। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গোলাপ মিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সহভাপতি লূৎফুল হক খোকন ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বপন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল বাছির, সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী কালা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াকুব আলী, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, তার স্ত্রী জরিনা বেগম, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক, হাফিজ মাসুম।

জকিগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সভাপতি ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে আর কোনো নেতা মনোনয়ন দাখিল করেননি। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মর্তুজা আহমদ চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরফুদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

কানাইাঘাটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিলেট মহানগর কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন চৌধুরীর পাশপাশি বিদ্রোহী জেলা আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।। এ উপজেলায় বিএনপির কেউ প্রার্থী হননি।

গোলাপগঞ্জে দলীয় প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদের সাথে বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ওয়াহাব জোয়ারদার। এ উপজেলায় জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাওলানা রশিদ আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান। এ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও তিন নেতা। তারা হলেন- দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব ও কার্যকরী কমিটির সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম আহমদ। এছাড়া জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল হাসনাত ও সহ-সভাপতি আলকাছ আলীও এই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত