সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:৩৬

প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সবচেয়ে পিছিয়ে সুনামগঞ্জ

প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুনামগঞ্জ। পিছিয়ে থাকা পাঁচটি জেলার মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ।

জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নির্দিষ্ট করা আছে ১: ৩০। যদিও দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই সে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রাথমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। পরের অবস্থানে সুনামগঞ্জ। অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি জেলার বাকি তিনটি হলো কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।

প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রায় শতভাগে পৌঁছেছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছরই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদনেও শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে। অধিদপ্তরের গত বছর প্রকাশিত অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের ৭৯টি বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। দুজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭২১ বিদ্যালয়ে। আর তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭ হাজার ৭৬৪ বিদ্যালয়ে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ৮ হাজার ৫৬৪টি বিদ্যালয়ে তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে। যদিও অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, একটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে চারজন শিক্ষক প্রয়োজন। অন্যথায় মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত সম্ভব নয়।

শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে বেশ। তবে সে তুলনায় নিয়োগ দেয়া হয়নি পর্যাপ্ত শিক্ষক। ফলে বিদ্যালয়গুলোয় তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক না থাকলে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে—এটাই স্বাভাবিক। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বেশকিছু পদ খালি পড়ে আছে। সরকারের উচিত, শূন্য পদগুলোয় অতিদ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭২ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৮২৮ জন। সে হিসাবে এ জেলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৫৭। আর নতুন করে জাতীয়করণ বিদ্যালয়গুলোয় এ ব্যবধান আরো বেশি। জেলার নতুন জাতীয়করণ বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৬০।

হাওর অঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৫। আর কক্সবাজার জেলায় প্রতি ৫৪ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন একজন। এ জেলার নতুন জাতীয়করণ বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৬৮।

শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, ‘শূন্য পদের তুলনায় শিক্ষক নিয়োগের হার কম। তাই এ সংকট। বিভিন্ন উপজেলায় পরিদর্শনে গেলে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়। কিছুদিন আগেও সেন্ট মার্টিন গিয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি দেখে এসেছি। নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিলে সংকটে থাকা বিদ্যালয়ের শূন্যপদগুলো পূরণে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে থাকা আরেক জেলা নারায়ণগঞ্জ। বন্দর জেলাটির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৫৩। অন্যদিকে হাওড়বেষ্টিত হবিগঞ্জে ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন একজন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গত ১০ বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৩৭। আগামী পাঁচ বছরে আরো এক লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগ সম্পন্ন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১: ৩০-এ নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। এসব বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী। আর শিক্ষক রয়েছেন ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯১৬। এ বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ৬১২ জন। তাদের পাঠদানে রয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩১৮ জন শিক্ষক।

সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত